মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গিয়ে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য উভয় পক্ষকে সংলাপে বসার আহ্বান জানান। পরে বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা শেখ হাসিনার মতামত জানতে চান। তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপ করতে চান না বলে সাফ জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প আগে সংলাপ করুক তারপর এ বিষয়ে ভেবে দেখবো।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বিষয়টি উঠে আসে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারকে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করেন। সাংবাদিক বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয়রা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দাবি করেছে এবং বর্তমান শাসক হাসিনা শেখ ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন। আমেরিকা কি জানে, ভারতীয় প্রভাবের কারণে আওয়ামী লীগ ও হাসিনার প্রতি ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে? এমন অবস্থায় বাংলাদেশি জনগণের ভোটাধিকার থাকা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া পুরোপুরি অসম্ভব।
দ্বিতীয় প্রশ্নে সাংবাদিক আরও বলেন, হাসিনা শেখ গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু উত্তেজক এবং অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাটের গাড়িতে হামলার পরও তিনি একই কাজ করেছিলেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বসে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেন।
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমার মনে হয়, আমি আপনার প্রশ্নটা বুঝতে পেরেছি। আমি শুধু বলে রাখি যে, আমরা স্পষ্ট করেই বলেছি, আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রত্যাশা করি, তারা কূটনীতিকদের যথাযথ নিরাপত্তার জন্য ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। এমনটি আমরা সকল দেশের সরকারের কাছেই আশা করি।
তিনি আরও বলেন, আপনার প্রথম প্রশ্নের জবাবে আগেই বলেছি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সবার। সব রাজনৈতিক দল, ভোটার, সরকার, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের দায়িত্ব অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের। আর আমরা বাংলাদেশে সেটিই চাই, যা বাংলাদেশের জনগণ চায়। বাংলাদেশে যেন শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।
পরে একজন সাংবাদিক বাইডেন-ট্রাম্পের প্রসঙ্গ তুললে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, “আপনার প্রশ্নের প্রথম অংশের (বিডেন-ট্রাম্প সংলাপ) জবাবে আমি যা বলেছি তা ছাড়া অন্য কোনো মন্তব্য করব না। আমরা বিশ্বাস করি, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, “আমরা জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং আমরা সহিংসতার ঘটনাগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিচ্ছি।বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আমরা সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানাই এবং আমরা তা চালিয়ে যাব।
পরে আরেক সাংবাদিক বলেন, আমার দুটি ছোট প্রশ্ন আছে- বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াত জোট সারাদেশে তাণ্ড’ব চালাচ্ছে। ফের সহিংসতার আশ”ঙ্কায় সারাদেশে সড়ক ও রেল অবরোধের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিরোধী দল বিএনপি। আসন্ন সাধারণ নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে বলে দেশবাসী মনে করছে। এতে একজন পুলিশ সদস্য নিহ’ত এবং প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুর করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষিদ্ধ করবেন কী?
জবাবে মিলার বলেন, “যেমন আমি আগেই বলেছি, আমরা ভিসা বা অন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করার আগে উল্লেখ বা মন্তব্য করি না। তবে, আমরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সমর্থন অব্যাহত রাখছি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।