৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর পাল্টে যায় দেশের রাজনৈতিক চিত্র। এরপর ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়।
এদিকে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বিএনপির সঙ্গে পুরনো সব বিরোধ মেটানোর প্রস্তাব দিয়েছেন শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়।জয়ের এমন প্রস্তাব নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। সরকার পতনের পর চেয়ারপারসনও বলেছেন- আমরা প্রতিশোধ, প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চাই না। আমরা সৌহার্দ্য, ভালোবাসা এবং সুসম্পর্কের রাজনীতি করতে চাই। কিন্তু একই সময়ে জনগণের কাছে জবাবদিহি একটা বড় বিষয়।
আমরা যা করেছি তার জন্য জনগণ আমাদের বিচার করবে। আজ আওয়ামী লীগকে গত ১৫ বছরের কর্মকাণ্ডের জবাব দিতে হবে। তারা কিভাবে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি ধ্বংস করেছে তার জন্য তাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
আমরা বিশ্বাস করি- যেকোনো দলের যেকোনো ব্যক্তির রাজনীতি করার অধিকার আছে, সেভাবে করবে।’ বিএনপির সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে আগ্রহ প্রকাশ করে গত ৮ আগস্ট জয় রয়টার্সকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বলেছেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে, সেগুলো মনে রাখার প্রয়োজন নেই। তার এমন বক্তব্যে আমি খুশি। আমরা অতীত ভুলে যাই। আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ না করি।
ঐকমত্যের সরকার হোক বা না হোক আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ‘
গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বিএনপির সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে জয় আরো বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে আমরা বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে চাই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। রাজনীতি ও আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে আমি মনে করি। আমরা নানা ইস্যুতে তর্ক করতে পারি। আমরা কোনো বিষয়ে একমত না-ও হতে পারি। তবে ভিন্নমত পোষণের অধিকারের প্রতি আমাদের একমত থাকতে হবে। আর আমরা সব সময়ই আপস করার উপায়ও খুঁজে বের করতে পারি। ’
এসব বিষয়ে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বিএনপি কখনো জনগণের বিরুদ্ধে কিছু করেনি। দেশ চালাতে গিয়ে কিছু ভুল হয়, কিন্তু সেই ভুল দেশ ও জনগণের ক্ষতি করেনি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিএনপি দিয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্র, মুক্তবাজার অর্থনীতি সেটা বিএনপি দিয়েছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে। সেই বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে তখনকার হাওয়া ভবনের কথা বলে আয়নাঘরের সঙ্গে তাকে তুলনা করা হয়। হাওয়া ভবন একটা ব্যক্তিগত অফিস ছিল, যা দেশের অর্থনীতি, রাজনীতির কোনো ক্ষতি করেনি। এ নিয়ে একটা প্রজেকশন করার চেষ্টা করা হয়। এটা একটা ষড়যন্ত্র। একটা দলকে হেয় করার জন্য, তার অর্জনকে খাটো করার জন্য। নির্বাচন হোক- তাহলে জনগণই বেছে নেবে কোন দলটা ভালো কোন দলটা ভালো না, কোন নেতা খারাপ, নির্বাচনেই প্রমাণ হবে। কিন্তু চাপিয়ে দেওয়া- এটা করলে ভালো হবে, ওটা করলে ভালো হবে- সেটা নির্বাচনের মাধ্যমেই ঠিক হোক। ’
মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচনে যেই আসুক মেনে নিতে হবে। আমাদের আমলে আমরা এমন কোনো আইন করেছি যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী? পারবেন না দেখাতে। আওয়ামী লীগের করা সব আইনই গণতন্ত্রের বিপক্ষে গেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপিকে তুলনা করলে তা হবে অশালীন। আমাদের স্বাধীনতার চেতনা, অর্থনীতি, রাজনীতি, মূল্যবোধ সব ধ্বংস করেছে। একজন বিচারপতিকে মানুষ মারছে, আদালতের মধ্যে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় নেতাদের ডিম ছুড়ছে কারণ মানুষের মধ্যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। বিএনপি আর আওয়ামী লীগকে এক পাল্লায় মাপলে হবে না। বিএনপি দেশে সবচেয়ে ভালোটা করার চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ একদলীয় বাকশাল করেছিল, আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সব পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল, আমরা সব চ্যানেল-পত্রিকা চালু করেছি। হাওয়া ভবনে কাউকে আটকে রাখা হয়েছে, কাউকে নির্যাতন করা হয়েছে? একটা প্রমাণ দিন। সুতরাং বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তুলনা করাটা ‘ইনজাস্টিস টু আস’।”