বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি।বাংলাদেশের ইতিহাসের রাজনিতীর অন্যতম বড় একটি দল এটি। তবে এই দলটির বর্তমান অবস্থা বেশ সমিচীন। আর সেই সাথে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের সমস্যা। বিশেষ করে নেতাকর্মীরা একে একে দল ছেড়ে চলে যাচ্ছে।আর এরই মধ্যে শীর্ষ দুই নেতার পদত্যাগ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই নানান গুঞ্জন চলছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিতে।গত ২৮ জুন ‘শারীরিক অসুস্থতা’ দেখিয়ে বিএনপি থেকে অব্যাহতি চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছেন দলের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) শাহজাহান মিয়া ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হানিফ।
এরই মধ্যে আবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন।’
দুই নেতার অব্যাহতির পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যে বিএনপিতে নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলছে। দলের অন্দরে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন অনেকে। অনেকে এ দুই ঘটনায় ‘দুয়ে দুয়ে চার’ মেলাচ্ছেন। তবে অনেকে একে কেবলই কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
দলীয় একটি সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং সরকারবিরোধী কার্যকর কোনো কর্মসূচি পালন করতে না পারায় রাজনৈতিক হতাশায় ভুগছেন বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা। দলের ভবিষ্যৎ শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে সিনিয়র নেতাদের মাঝে এক ধরনের হতাশা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।
বিএনপির চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া সরকারের ইচ্ছায় মুক্ত থাকলেও কার্যত তিনি রাজনীতিতে অংশ নিতে পারছেন না। ফলে দলের নেতৃত্ব চলে যাচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও তার অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপির নেতৃত্বের একটি অংশ মনে করছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারেকের অনুসারীরা দলের সিনিয়র নেতাদের কোণঠাসা করতে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই সম্মান বাঁচাতে সিনিয়র নেতৃত্বের একাংশ রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। আবার কেউ কেউ দল ছেড়ে দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন সামরিক কর্মকর্তা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। এ তালিকায় সামনে আরও নাম যোগ হতে পারে।
যদিও বিএনপির নেতৃত্বের আরেকটি অংশের দাবি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল ভাঙার এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখানে ইন্ধন যোগাচ্ছে বিরোধী শক্তি। এমনকি ‘বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন’ বলে ওবায়দুল কাদেরের করা মন্তব্যে এই ইন্ধনের সূত্র পাচ্ছে ওই অংশ। যদিও এ নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছেন না।
২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়ই বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সিনিয়র সদস্য দলত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। সে যাত্রায় তাদের পদত্যাগ করার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও পরে পদত্যাগ করেন দলের স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম. মোর্শেদ খান। যদিও তাদের পদত্যাগের বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলা হয়নি।
এসব বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দলের যে দুজনের পদত্যাগের কথা বলা হচ্ছে তারা ব্যক্তিগত কারণের কথা বলেছেন। আর আওয়ামী লীগ হচ্ছে এখন ডুবন্ত জাহাজ, ডুবন্ত জাহাজে কেউ ওঠে না বরং ডুবন্ত জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়ে বাঁচার জন্য।’
এ দিকে এ সব খবরকে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন দলের অনেকেই। এ নিয়ে কথা বলা হয় বেশ কয়েকজনের সাথে। তার মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘জানা মতে, আমাদের দলের কোনো নেতাকর্মী পদত্যাগ করছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ তো অনেক কথা বলে, অনেক কিছু করে। আমরা মনে করি এটা ভিত্তিহীন খবর।’