শাহজাহান ওমর জামিন পেয়ে পরদিন আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এবং অন্যান্য নেতারা এখনও কারাগারে। এটা কাকতালীয় কি না এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির অন্য নেতারা আমাদের এখানে অপরাধের সঙ্গে বিষয়টি তুলনা করতে হবে।
শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের এসব কথা বলেন।
প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “দিনের আলোতে পুলিশ হত্যার দায়ে যারা হেভিওয়েট নেতারা কারাগারে আছেন, তারা পালাতে পারবেন না। তাদের উপস্থিতিতেই এ ঘটনা ঘটেছে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, পুলিশ হাসপাতালে হামলা, একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।” মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাসের সামনে।এক অপরাধ আর অন্য অপরাধের পার্থক্য বুঝতে হবে।
নির্বাচনে দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, কারা অনুপ্রবেশকারী, চিহ্নিত করুন।
পুলিশ হত্যা ও প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলার মামলায় গ্রেপ্তার শাহজাহান ওমর। জামিনে এসে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেন তিনি। সেক্ষেত্রে তিনি অনুপ্রবেশকারী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, জোর করে অনুপ্রবেশ আসছে। কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় এসেছেন। আমরা এখানে গণতান্ত্রিক নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়ে সচেতন নই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দল পরিবর্তন করা যায়। তিনি বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এটা কি অপরাধ?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণ ভোটের জন্য মুখিয়ে আছে। সারা বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ উৎসাহব্যঞ্জক। শত নিষেধাজ্ঞা, আন্দোলনের হুমকি, সন্ত্রাস ও অগ্নিসংযোগের মুখেও মানুষ নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। বিএনপির এক দফা গভীর গর্তে পড়েছে। তাদের আন্দোলন ভ্রান্তির বালিতে আটকে আছে। নেতাকর্মীদের প্রতি আস্থা হারিয়েছে তাদের নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতৃত্বের আহ্বানে তারা কখনো আন্দোলনের মাঠে নামবে না।
বিএনপির রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করা যাবে না দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কোনো দলকে বিভক্ত করা আমাদের নীতি নয়। ভুল নীতির কারণে বিএনপি বিভক্ত হয়েছে। যারা উচ্চস্বরে বলছেন বিএনপি ভাঙতে পারেননি তারা সত্য বলছেন না। আজকে ‘তৃণমূল বিএনপি’ এত প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে, তারা সবাই বিএনপির লোক। এদের অধিকাংশই বিএনপির নেতা-কর্মী।
বিএনপিতে বিভক্তির সুযোগ আওয়ামী লীগ নিচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থনের অভাব দেখছি না। আমরা এত বিপদে পড়েছি যে বিএনপিকে শক্তি দেখানোর সুযোগ নিতে হবে! আমি তাই মনে করি না.’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানকে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে- কাদের বলেন, ‘এটা তার (শাহজাহান ওমরের) ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। এটাও গণতন্ত্র। আমি এই দল পছন্দ করি না, আমি অন্য দলে যাব, আমরা তাতে হস্তক্ষেপ করিনি। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় এসেছেন।
বিএনপি বলছে তাদের নেতাদের ব্ল্যাকমেইল করে নির্বাচনে আনা হচ্ছে- কাকে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে? বিএনপি নেতৃত্ব এতটাই দেউলিয়া যে ব্ল্যাকমেইল আসবে! রাজনৈতিক পরীক্ষায় এতটাই ব্যর্থ যে সে কারো ব্ল্যাকমেইলিংয়ে প্রলুব্ধ হয়ে অন্য দলে চলে যাবে!’
দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, “নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে নয়, এটি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এটা আইন করে করা হয়েছে। ইসি সম্পূর্ণ স্বাধীন। এখন সরকারের মতে, সেখানে কোনো নির্বাচন হবে না। আইন প্রয়োগ বা নির্বাচন-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড।সরকার এখন রুটিন ওয়ার্ক।ইসি স্বাধীনভাবে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে।আমাদের বিরুদ্ধে গেলেও আমরা তাকে স্বাগত জানাব।তারা যে কোনো যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাব।’
হেভিওয়েট নেতারা দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভয় পান- এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। যদি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী জনপ্রিয়তা বাড়াতে হেভিওয়েটের সীমানা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সেটা স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়। আমরা এটা বন্ধ করতে পারি না। গণতন্ত্র হলো প্রতিযোগিতা। সুষ্ঠু নির্বাচন, সুস্থ প্রতিযোগিতা। এখানে আমরা প্রার্থীকে প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করি।
দলীয় স্বতন্ত্রদের বসানোর ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ হবে কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, স্বতন্ত্রদের বসানোর চেষ্টার কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। নির্বাচন হোক, দেখা যাক, জনগণ যাকে চাইবে, তিনিই জিতবেন।
শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। ভবিষ্যতে তা বাড়বে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো সংঘাত-বিশৃঙ্খলা হলে তার পুরো দায় নির্বাচন কমিশনের। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে তাতে আস্থা থাকবে।
অংশীদারদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে তা হয়ে যাবে।