গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে।
গত ৯ জানুয়ারি নির্বাচনের ফলাফল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ১০ জানুয়ারি বিজয়ী সংসদ সদস্যরা শপথ নেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশি-বিদেশি মহলের নানা তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে প্রতিনিধি পাঠায় এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। যদিও সে সময় তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যতবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যরা আলোচনা করেছে, ততবারই বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার শতভাগ আশ্বাস দিয়েছেন।
বর্তমান সরকারের অধীনে গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হলে প্রায় ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। পঞ্চমবারের মতো সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় প্রশ্ন থেকে যায় বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে রাজনৈতিক ভুল করেছে কি না?
বিএনপি ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে যে ভুল করেছিলো, একই ভুল আবার এক দশক পর ২০২৪ সালে করেছে বলে মনে হয়।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার ভিন্ন কোন রাস্তা নেই। একমাত্র দেশের জনগণই পারে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের সরকার নির্ধারণ করতে এবং এটাই গণতান্ত্রিক নিয়ম।
বিএনপির বিদেশী শক্তি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অতি নির্ভরশীলতা এবং তাদের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার তৎপরতা তাদেরকে আরও দুর্বল করেছে এবং ভুল পথে পরিচালিত করেছে বলেই মনে হয়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ পৃথিবীর বহু দেশ তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ না বললেও ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এক চিঠিতে একসঙ্গে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন।
জো বাইডেন তার চিঠিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কাজের অংশীদারিত্বের কথা উল্লেখ করেন এবং সফলভাবে একসঙ্গে কাজ করার ইতিহাসের কথাও বলেন।
শুরুতেই আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, জ্বালানি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং রোহি”ঙ্গা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
শুধু তাই নয়, বাইডেন বাংলাদেশকে তার উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এবং বিশেষ করে একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি ও ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
যদিও জো বাইডেনের চিঠিতে নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা হয়নি, বর্তমান প্রশাসনের সাথে একসাথে কাজ করার তার ইচ্ছা বর্তমান গণতান্ত্রিক প্রশাসনের পক্ষে বলে মনে হচ্ছে।
তাই বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো যখন বর্তমান সরকারের সাথে একত্রে কাজ করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র অন্য পথে যাচ্ছে বলে মনে হয় না। তাই সুপার বিদেশি শক্তির ওপর বিএনপির নির্ভরতা আরেকটি রাজনৈতিক ভুল বলে মনে হচ্ছে।
তথ্য বিশ্লেষক হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।