Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যে বিষয়ে আসছে ব্যাপক রদবদল

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যে বিষয়ে আসছে ব্যাপক রদবদল

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্তি বা বাদ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন। দুই নেতা জানান, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে তাদের মনে হয়েছে স্থায়ী কমিটিতে কাকে নিয়োগ দেওয়া যাবে সে বিষয়ে তার একধরনের সিদ্ধান্ত আছে।

উপযু্ক্ত সময়ে আনুষ্ঠানিকতা সারবেন তিনি। সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ২০১৯ সালের ২২ জুন স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, স্থায়ী কমিটিতে শূন্যপদ পূরণের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি।

এর আগেও একাধিকবার স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের কথা উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার কারণে এ কমিটিতে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বড় আন্দোলনের পর সংগঠনে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। তদনুসারে, কিছু ক্ষেত্রে পুনর্গঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়।

তবে স্থায়ী কমিটিতে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, কমিটিতে কোনো রদবদল হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের।
২০১৬ সালের মার্চে বিএনপি সর্বশেষ কাউন্সিল করে। ওই বছরের আগস্টে ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে ১৯টি পদ রয়েছে। এরপর থেকে পদ দুটি শূন্য রয়েছে।

এম কে আনোয়ার, তরিকুল ইসলাম, এএস হান্নান শাহ ও মওদুদ আহমদের মৃত্যুর পর ছয়টি পদ শূন্য হয়। সাতটি পদ শূন্য রেখে পদত্যাগ করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান। সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু নিয়োগ পাওয়ায় এখন পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে।

বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকবেন—এই শর্তে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত আছে বলে রাজনীতিতে আলোচনা রয়েছে। শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন ব্রেন টিউমারের কারণে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রফিকুল ইসলাম মিয়া অন্যের সাহায্য ছাড়া নড়তে পারেন না। তিনি কখনো স্থায়ী কমিটির বৈঠকে থাকেন না। নব্বইয়ের ওপরের জমির উদ্দিন সরকার সব সময় বৈঠকে থাকেন না। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি এখন অনেকটা নিষ্ক্রিয়।

স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, এখন বৈঠকে ৮ থেকে ১০ জনের বেশি নেই। কমিটিতে থাকলেও বার্ধক্য ও অসুস্থতাসহ নানা কারণে কোনো কোনো নেতাকে কখনোই বৈঠকে পাওয়া যাচ্ছে না।
দলীয় সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এমন কয়েকজন যোগ্য নেতার বিষয়ে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। তাঁরা হলেন সিনিয়র নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (অব.), বরকতউল্লা বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, শামসুজ্জামান দুদু ও রুহুল কবীর রিজভী। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও জহির উদ্দিন স্বপনের নামও আলোচনায় আছে। দুজনকে মেধাবী রাজনীতিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে তাঁদের ধারণা বেশ ভালো।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আহমেদ আজম খান বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পছন্দ বলে দলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে বিএনপির রাজনীতিতে এই দুই নেতার কোনো বক্তব্য নেই। চিকিৎসক নেতা হিসেবে জাহিদের সুনাম থাকলেও জাতীয় সমঝোতা নীতিতে নেতাকর্মীরা তাকে তেমন মনে করেন না। যদিও গত কয়েক বছরে দলের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক কাজ হয়েছে তাকে নিয়ে। আর আহমদ আজম খান কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নতুন বলা চলে। কোনো আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল না। অনেকেই ভাবছেন কেন তার নাম বিবেচনায় আসছে।

আবদুল্লাহ আল নোমান একজন যোগ্য ও বিচক্ষণ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সবার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। বিগত দলীয় কাউন্সিলে তাকে স্থায়ী কমিটিতে স্থান না দেওয়ায় সবাই অবাক। অসুস্থতার কারণে তাকে স্থায়ী কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এর বাইরে স্থায়ী কমিটির এক নেতা তার বিরোধিতা করে আসছেন।

সিনিয়র নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (অব.) মূল্যায়ন করে দলের এক নেতা বলেন, তিনি একজন পাকা রাজনীতিবিদ। তিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি মূল্যায়ন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনে নেতিবাচক ভূমিকার কারণে বিএনপির রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএনপির বিভিন্ন সিদ্ধান্তেরও খোলাখুলি সমালোচনা করেন, যেগুলো শীর্ষ নেতৃত্ব ভালোভাবে নেয়নি।

দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু একজন সফল ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক কূটনীতিতে দক্ষ। বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক টার্নিং পয়েন্টে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুপরিচিত। দলের প্রায় সবাই তাকে নিয়ে ইতিবাচক। দলের শীর্ষ নেতা ইতিবাচক হলে স্থায়ী কমিটিতে তার স্থান হবে।

বরকতুল্লাহ বুলু ও মোহাম্মদ শাহজাহান সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত দক্ষ। সারা দেশের সংগঠন সম্পর্কে তাদের ভালো ধারণা রয়েছে। শামসুজ্জামান দুদু একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদও।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্পর্কে বিএনপিপন্থী একজন বুদ্ধিজীবী বলেন, বড় ধরনের কোনো বিতর্ক ছাড়াই তিনি দলীয় কার্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি খুব ভালোভাবে পরিচালনা করছেন। সবচেয়ে বড় কথা, দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি তার দায়বদ্ধতা ও অঙ্গীকার তাকে সব সময় এগিয়ে রাখবে।

তবে শেষ পর্যন্ত যোগ্যতা, যোগ্যতা ও সততার মূল্যায়ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দলটির অনেকের মধ্যে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বলেন, তারেক রহমান তার বিশ্বস্ত ও প্রিয় নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে আসছেন। এবারও হয়তো তাই হবে।

 

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *