রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সাধারণ সভা শুরুর আগে ২৮ অক্টোবর দুপুর থেকে কাকরাইলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জায়গায়। একপর্যায়ে বেলা তিনটার দিকে বিএনপির সাধারণ সভা বন্ধ হয়ে যায়।
বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্য ও যুবদলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা নিহত হন। পরে আহত হয়ে একজন সাংবাদিকও মারা যান। এছাড়া সংঘর্ষে ৪১ পুলিশ ও ২৫ আনসার সদস্য আহত হন। ওই দিন অন্তত ২০ সাংবাদিক আহত হন। সংঘর্ষে সহস্রাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি।
এর প্রতিবাদে বিএনপির সাধারণ সভায় ‘পুলিশ হামলার প্রতিবাদে’ রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে দলটি। এরপর তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে দলটি। এরপর আবারও আগামীকাল রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার নতুন করে অবরোধ ঘোষণা করেছে দলটি।
নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছে না বিএনপি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সেক্ষেত্রে জনস্বার্থ বিবেচনা করে আন্দোলনে নতুন পরিকল্পনা আনা যেতে পারে।
বিএনপি জানায়, গত ২৪ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত দলের মহাসচিব, তিন যুগ্ম মহাসচিব, মিডিয়া সেলের প্রধানসহ গত ২৪ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত অন্তত ৪ হাজার ৮৪৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের ঘটনা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তারা মনে করেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কাউকে মুক্তি দেওয়া হবে না। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প দেখছে না দলটি। আন্দোলন প্রসঙ্গে দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা বলেন, নেতাকর্মীদের যতই গ্রেপ্তার করা হোক, বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় অন্তর্বর্তী নিরপেক্ষ সরকারের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা খবর পাচ্ছি যে, ক্ষমতাসীনরা প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠক করছে। গণভবনে শলাপরামর্শ হচ্ছে, কীভাবে জনগণের নির্ভীক-সাহসী লড়াই নির্মূল করা যায়। আমরা মনে করি, এতে লাভ নেই। কারণ, দেশের জনগণ দাবি আদায়ে হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছে। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
এদিকে বিএনপি নেতাদের অধিকাংশই ঘরে থাকতে পারছেন না। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার ও আত্মগোপনে নেতৃত্বে শূন্যতা সৃষ্টি হয় কিনা, তা নিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আবদুল মঈন খান মনে করেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। শীর্ষ নেতৃত্ব ছাড়াও এর শক্তি দলের মধ্য ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মী ও তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা।
গত বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নীতিনির্ধারকরা সরকারের কঠোর মনোভাব এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোভাব বিশ্লেষণ করেন। চলমান আন্দোলন দেশ-বিদেশের সবাই মেনে নিয়েছে বলে মনে করেন তারা। হরতাল ও অবরোধ উভয় কর্মসূচিতেই জনসমর্থন ছিল। সরকারের দমন-পীড়নের ব্যাপারে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক। সরকার দেশে-বিদেশে বিচ্ছিন্ন।
রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে বিএনপিকে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকতে হবে বলে পর্যবেক্ষণ করছেন নীতিনির্ধারকরা।
দলের জন্য কূটনীতিকদের নিয়ে কাজ করা বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, দেশের পরিস্থিতি থমকে আছে এবং এ থেকে পরিত্রাণ পেতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কোনো পথ খুঁজছে না বিএনপি। খুব শিগগিরই গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে বলে মনে করে বিএনপি। এমনই কিছু খবর আসছে। তা হলে নেতাকর্মীরা আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন এই নেতা।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, কর্মসূচিতে কিছুটা ভিন্নতা থাকবে। রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির পর আগামীকাল অবরোধ কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। হরতালও হতে পারে। তবে সাধারণ মানুষ যাতে আন্দোলনে বিরক্ত না হন, সে জন্য কর্মসূচি পরিবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আমরা মাঠে আছি, যে কোনো পরিস্থিতিতে মাঠে থাকব। এখন পর্যন্ত সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে, আশা করি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।