আন্দোলনের শেষ পর্যায়ের কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ‘রাজপথেই ফয়সালা’র প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে দলটি। একতরফা দাবি আদায়ের চূড়ান্ত আন্দোলনে সমমনা সব জোট ও রাজনৈতিক দল নিয়ে রাজপথ দখল করতে চায় দলটি।
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকতে চায় তারা। ক্ষমতাসীন বিরোধীদের হামলা-মামলা, গ্রেফতার, হয়রানি নির্বিশেষে দাঁতে দাঁত চেপে রাজপথে অবস্থান করতে চায় দলটির নেতাকর্মীরা। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে চলমান আন্দোলনের সফল পরিণতি ঘটনাতে চায় রাজপথে খাকা প্রধান বিরোধী দলটি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর মাসটিকে তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। এটাই হবে বিএনপির দীর্ঘস্থায়ী সরকারবিরোধী আন্দোলন-কর্মসূচির শেষ ধাপ। আন্দোলনের সর্বশেষ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনগণ নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এই দাবিতে আমরা রাজপথে আছি। যতই অত্যাচার, মামলা-হামলা হোক না কেন, আমাদের দমন করা যাবে না। রাজপথে সিদ্ধান্ত হবে ইনশাআল্লাহ। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কেমন হবে তা নির্ভর করবে আগামী কয়েকদিনের ওপর।
জানা গেছে, বিএনপির পূর্বঘোষিত ১৫ দিনের প্যাকেজ কর্মসূচি ৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ফেনী-মিরসরাই হয়ে রোডমার্চের মাধ্যমে শেষ হবে। এতে পৃথক কর্মী ও নারী সমাবেশের কর্মসূচিও রয়েছে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় র্যালি ও সারাদেশে আঞ্চলিক রোডমার্চ কর্মসূচি রয়েছে। এরপর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সমমনা জোট ও দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বিএনপির আলোচনা শুরু হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে তাদের মতামত নিয়ে আলোচনা করে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বিএনপির হাইকমান্ড।
এটাই হবে বিএনপির এক দফা আন্দোলনের শেষ পর্ব বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিরামহীনভাবে এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বিএনপি। তবে শেষ পর্যায়ে সমমনা দলগুলো যৌথ থেকে বেরিয়ে এসে এক মঞ্চে একসঙ্গে কর্মসূচি পালনের সম্ভাবনা বাড়ছে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিএনপির এক দফা আন্দোলনের শেষ পর্বের কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকায় মহাসমাবেশ, সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির পক্ষে মত প্রকাশ করছেন বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর নেতারা।
তবে এবার পুরো দেশের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার দিকের কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন সবাই। অতীতের আন্দোলনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে ঢাকামুখী কর্মসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কী কর্মসূচি দেওয়া হবে তা নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। কী কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য যখন যে কর্মসূচির প্রয়োজন হবে, তখন সে কর্মসূচিই দেওয়া হবে।
২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের ওপর চারদিক চাপ সৃষ্টি করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে চায় বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে ক্ষমতাসীন দলকে ফেরানো বা নির্বাচন ঠেকানো কঠিন হতে পারে বলে মনে করেন বিরোধী দলের নীতিনির্ধারকরা। তাই তফসিল ঘোষণার আগেই তা সমাধান করতে চায় বিএনপি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে চলমান এক দফা আন্দোলনের সফল পরিণতির জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রাজপথে আন্দোলনে জনগণের দাবি আদায় হবে।