Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলন নিয়ে যেভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েছে আ’লীগ

বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলন নিয়ে যেভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েছে আ’লীগ

নভেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এর আগে অক্টোবরে বিএনপি সরকার উৎখাতের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। দলটির শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ এ বিষয়ে প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়ে রেখেছেন। তবে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপিকে পঙ্গু করে দেওয়ার পাল্টা হুমকি দিয়ে আসছেন। তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব নিয়ে শঙ্কি”ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অতীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ভর করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আন্দোলন মোকাবেলায় সফল হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন হওয়ায় আওয়ামী লীগকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ও তার শরিকদের আন্দোলন কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তার কৌশল অভ্যন্তরীণভাবে নির্ধারণ করছে ক্ষমতাসীন দল।

২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। এরপর সংশোধিত সংবিধানের আলোকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিএনপি ও তার সহযোগীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে অনড় থাকায় নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সহিংস আন্দোলন শুরু করেছে। নির্বাচনের দিন তারা বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, নির্বাচনকে ব্যাহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃঢ়তার কারণে তারা সফল হয়নি।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর তারা সরকারের পতন ঘটানোর জন্য রাজধানীর নয়াপল্টনে বড় সমাবেশ করতে চেয়েছিল- সরকারের কাছে এমন তথ্য ছিল। যার কারণে সমাবেশ অনুষ্ঠানের আগেই তাদের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয় এবং তখনই তাদের আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। শেষমেশ বিএনপি রাজধানীর গোলাপবাগের গরুর হাটে গিয়ে নামমাত্র সমাবেশ করে মুখ রক্ষা করে। সমাবেশটিও গুরুত্ব হারায়। ওই সময়ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দৃঢ় ভূমিকার কারণে বিএনপি সফল হতে পারেনি। গত ২৭ জুলাই রাজধানীতে বড় সমাবেশ করার পর ২৮ জুলাই ঢাকা প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি দেয় বিএনপি। কিন্তু সেখানেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে রাজপথে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসানীতি বাস্তবায়নের কারণে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা চাপের মধ্যে আছে। তারপরও বিএনপির আন্দোলন দমনে তারা অতীতের মতো শক্ত ভূমিকা পালন করবে এটা আশা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদেরও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, অতীতে বিএনপি অনেক দফাই দিয়েছে, কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে আমরাও সেটি শুনে আসছি। তারা কোনোবারই আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি, ব্যর্থ হয়েছে। আমরা অতীতের মতো ওইভাবেই দেখছি। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমরা জানি, বিএনপি নির্বাচন ভণ্ডুল করার জন্য অতীতের মতো অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সেই অপচেষ্টা কখনো সফল হবে না।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলন বলে কিছু নেই। তাই এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার মতো কোনো কারণই নেই। বিএনপি একটি ব্যর্থ দল, তারা আন্দোলনেও ব্যর্থ, নির্বাচনেও ব্যর্থ। বিএনপি মাঝে মাঝে ঈদের পরে বর্ষার পরে পরীক্ষার পরে শীতের পরে আন্দোলন করবে এমনটা বলে তাদের নেতাকর্মীদের একটু আশা দিয়ে রাখে। তারা কোনোদিনও আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে না, তারা সফলও হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি যদি আবারো রাজপথে আন্দোলনে নামে, জ্বালাও পোড়াও করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, অতীতে বিএনপির সব আন্দোলন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোরভাবে দমন করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তেমন বেগ পেতে হয়নি। তখন সরকারের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলের তেমন কোনো চাপও ছিল না। কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের তরফ থেকে জোরালো আশ্বাস দেয়ার পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসানীতি আরোপ ও বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এর আগে র্যা ব-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নামে স্যাংশন দিয়েছে। সামনে আরো স্যাংশন আসতে পারে- এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে, সেই আলোচনাও আছে।

মার্কিন ভিসানীতি আরোপ ও বাস্তবায়নের পর থেকে বিএনপি ও তার মিত্ররা কিছুটা হলেও উজ্জীবিত হয়েছে এবং অবাধে সভা-সমাবেশ করছে। গত ১২ জুলাই থেকে বিএনপি সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন ঘোষণা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশী কিছু রাষ্ট্র ও সংস্থার চাপের মধ্যে বিএনপির সরকার পতনের চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আগের মতো ভূমিকা পালন করবে কি না তা নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় রয়েছে। সরকারের তরফ থেকেও ভবিষ্যতের জন্য তাদের স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না থাকলে কী হতে পারে? আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা না থাকলে বিদেশী রাষ্ট্রগুলো মনে হয় না ভালোভাবে নিবে।

চূড়ান্ত পর্যায়ে বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন আওয়ামী লীগের হাতে গোনা। কারণ কখনও কখনও ছোট আন্দোলন ভয়”ঙ্কর হতে পারে। আবার অনেক সময় বড় আন্দোলনও ব্যর্থ হয়। সেক্ষেত্রে বিএনপির যে কোনো আন্দোলনকে তারা গুনছে এবং তা নিয়ে তারা চিন্তিত। তবে ঝামেলা এড়িয়ে নির্বাচনের দিকে এগোতে চায় আওয়ামী লীগ।

ঝামেলা এড়াতে চাওয়ার মানে এই নয় যে, বিএনপিকে ছাড় দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ বিএনপির সব কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে এবং রাজপথে লড়াই করার শক্তি বাড়াচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আরও কঠোরতা দেখাবেন। কারণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করেন এটাই তাদের শেষ পর্যায়। তাদের নাম তালিকায় আছে, তাই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না, ভবিষ্যতে যা হয় হোক, বিএনপি ঠেকাও। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে। ফলে বিএনপির আন্দোলন দমনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আরও কঠোরতা দেখাবেন।

বিএনপির চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আমি যতদূর জানি এদেশে গণঅভ্যুত্থান করার মতো সাংগঠনিক শক্তি বিএনপির নেই। তারা মনে করে তাদের পেছনে রয়েছে আমেরিকা। তারা সেই শক্তি নিয়ে কাজ করছে। সেখান থেকে কিছু হবে এই আশায় তারা দেখছেন। এটা কতটা সম্ভব তা সময়ই বলে দেবে। কারণ ভারত এখনও কিছু জানায়নি। ভারত এখনও নীরব।

 

 

 

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *