বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলু বিএনপি নেতার আশ্বাসে প্রার্থী হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন, তাতে কোনো ক্ষতি হয়নি। তিনি বলেন, গাবতলী উপজেলা বিএনপির এক নেতার আশ্বাসে প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচনে হেরে গেলেও হারিনি।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে প্রায় দুই লাখ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাত্র ২ হাজার ৩৫ ভোট পেয়ে জামানত হারান তিনি।
এত কম পাওয়া প্রসঙ্গে রেজাউল করিম বাবলু বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছি। এবারও গাবতলী উপজেলা বিএনপির এক নেতার আশ্বাসে প্রার্থী হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে হেরে গেলেও হারিনি। “আমি যে দামে ঘোড়াটি কিনেছি সেই দামে বিক্রি করেছি”, “মাঝে চাবুক আমার লাভ”। ‘ক্ষতি হয়েছে বিএনপির’। এ আসনে নৌকা মার্কার বিজয়ী হয়ে ‘বিএনপির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে আওয়ামী লীগ’।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ার গাবতলী উপজেলা। তাই রাজনৈতিক মহলে গাবতলী উপজেলা বিএনপির ঘাঁটি বা শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোর্শেদ মিল্টন বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান। উপজেলা চেয়ারম্যানের পদত্যাগপত্র কার্যকর না হওয়ায় মোরশেদ মিল্টনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। আর আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী না দিয়ে আসনটি জোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে দিয়েছে। নাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী ছিলেন জাতীয় পার্টির আলতাব হোসেন।
বর্তমান সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনের আগের দিন বিএনপির রেজাউল করিম বাবলু তাকে ট্রাক ব্র্যান্ডে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নির্বাচিত হলে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার আশ্বাস দেন। ফলে রাতারাতি বদলে গেল দৃশ্যপট। রেজাউল করিম বাবলু ১ লাখ ৯৮ হাজার ২০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি বিএনপিতে যোগ দেননি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন দুই হাজার ৭৬ ভোট। আর এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ডা. মোস্তফা আলম নান্নু ৯১ হাজার ২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে রাতারাতি এমপি হওয়ার আশায় এ আসনে সর্বোচ্চ ২৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। অবশেষে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বগুড়ার অন্য ৬টি আসনে তেমন প্রার্থী ছিল না। কিন্তু এবার বিএনপি কাউকে সমর্থন না দেওয়ায় জামানত হারান ১২ প্রার্থী।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তা রক্ষায় প্রার্থীর প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশ পেতে হবে।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বগুড়া-৭ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৫৮ জন। ভোট পড়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪৫১টি। বাতিল হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৪ ভোট। প্রদত্ত ভোটের শতাংশ 21.95 শতাংশ। প্রার্থী যদি প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশ, 14,056 ভোট পান, তবে জামানত ফেরত দেওয়া হবে।
তবে নির্বাচিত নৌকার প্রার্থী ছাড়া বাকি ১২ প্রার্থীর কেউ এত ভোট পাননি। ফলে 12 জনের সবাই তাদের নিরাপত্তা ফিরে পাবে না।
এত কম ভোট পাওয়ার বিষয়ে রেজাউল করিম বাবলু আরও বলেন, এ আসনে মানুষ ভোট দেয় না। 2018 সালে বিএনপির সমর্থনে নির্বাচিত হয়ে দলে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের পর বিএনপির সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। এ কারণে যোগ দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে আমি প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলাম না। কিন্তু বিএনপির এক নেতার আশ্বাসে প্রার্থী হয়েছি।
এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাবতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম হেলাল বলেন, ২০১৮ সালে বিএনপি ভোট বয়কট করেনি।দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এবার ভোট বর্জন করেছে বিএনপি। যার কারণে কোনো প্রার্থীকে আশ্বাস দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।