দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ সরকার তুরস্ক থেকে ২০ লাখ গোলাবারুদ আমদানি করে। মূলত একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে জুলাই থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন দমন করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আন্দোলন জোরদার হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সরকারের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের দাবি জানায়।
জানা গেছে, ডিএমপি’র যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস এবং পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার দেওয়ান জালাল উদ্দিন চৌধুরী তুরস্ক সফরে যান। সেখানে তারা গোলাবারুদের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে অনুমোদন দেন। সফরের অনুমতি দিয়ে গত বছরের ২৯ আগস্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র মহাসমাবেশে এই আমদানিকৃত গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়। সেদিন নয়াপল্টন, কাকরাইল, পুরানা পল্টন, দৈনিক বাংলার মোড় ও মতিঝিল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও ভারী কার্তুজ বুলেটের হামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশের মুহুর্মুহু গুলিতে দুপুরের আগেই বিএনপি’র মহাসমাবেশ ভেঙে যায়।
পুলিশের নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ জুলাই তুরস্কের সঙ্গে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমদানির চুক্তি হয়। ৫ সেপ্টেম্বর তুরস্কের সমরাস্ত্র কারখানা পরিদর্শনের পর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদের চালান বাংলাদেশে পৌঁছায়। এই গোলাবারুদ বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে বিতরণ করে আন্দোলন দমনে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনেও এই গোলাবারুদ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
অতীতে এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আমদানি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ বলেন, “অস্ত্র আমদানির বিষয়টি মজুতের ওপর নির্ভর করে। চাহিদা অনুযায়ী মজুত কম থাকলেই আমদানি করা হয়। তবে আমাদের সময়ে এত গোলাবারুদ একসঙ্গে আমদানি হয়নি। তখন চাহিদাও ছিল কম।”