বর্তমানে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে সরকার কিছুটা শিথিলতা আরোপ করেছে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ সহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এদিকে দিনে দিনে বিএনপি’র আন্দোলন বেগবান হচ্ছে। তবে এ বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগও চুপ করে বসে থাকবে না বলে জানিয়েছে ।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ছাড় দিলেও বিরোধী দলের আন্দোলন বাড়তে দেবে না ক্ষমতাসীন দল। তারা পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতির মাঠ দখল করতে চায়। এক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি দলীয়ভাবে মোকাবিলা করতে কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। অবশ্য সরকারি দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার পাশাপাশি দলটির নেতা-কর্মীদের সংঘাতে না জড়াতেও সতর্ক করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে কিছুটা নমনীয় হয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ৭ মে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা না দিতে বিরোধীদের নির্দেশ দেন দলটির নেতা। বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানান। বিরোধি দল পরে জাতীয় পরিষদের বৈঠকসহ একাধিক অনুষ্ঠানে বিরোধী দলের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গত ১৪ আগস্ট সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের বিরোধী দল একটু সুযোগ পাচ্ছে। তারা আন্দোলন করবে করুক। তাই আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি—খবরদার, যারা আন্দোলন করছেন, তাদের কাউকে যেন গ্রেফতার বা ডিস্টার্ব না করা হয়।’ এর আগে গত ২৩ জুলাই বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তারা যদি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাও করতে আসে, তাও বাধা দেওয়া হবে না। বরং তারা অফিস পর্যন্ত হেঁটে আসতে পারলে সসম্মানে বসিয়ে চা খাওয়ানো হবে। তাদের কথা শুনতেও আপত্তি নেই।’
সরকারি দলের নমনীয় অবস্থানের প্রেক্ষাপটে গত ৫ মাস ধরে মাঠের রাজনীতিতে তৎপরতা বাড়িয়েছে বিএনপি। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় প্রতিদিনই রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছেন। আন্দোলন কর্মসূচির নামে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনও করেছে দলটি। তবে বিএনপির শোডাউনের পাল্টা হিসেবে সরকারি দলও তাদের দিনকেন্দ্রিক কর্মসূচিকে সামনে রেখে রাজধানীতে শোডাউন করেছে।
বিএনপির অভিযোগ, সুষ্ঠুভাবে কর্মসূচি পালন করলেও শুরুতে বিগত সময়ে বাধার মুখে পড়েছেন। বেশ কয়েকটি ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দলের সঙ্গে সংঘ”র্ষের ঘটনা ঘটেছে। হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। তাদের আন্দোলন উপলক্ষে সরকারি দল তাদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দলের দাবি, আন্দোলনে জনগণের সাড়া না পেয়ে সংঘা”তে জড়িয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চায় বিএনপি। কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা সফল হবে না।
আওয়ামী লীগ ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কর্মসূচিতে প্রাথমিকভাবে কম লোক দেখা গেলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, যা সরকারের জন্য উদ্বেগ বাড়ায়। এভাবে চলতে থাকলে বিএনপি কর্মীরা আরও সাহসী হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন দল। পরে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনাকে কিছুটা গতি অর্জন করতে হবে। যার কারণে সরকার প্রথমে ছাড় দিলেও এখন নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবছে।
বিএনপি দাবি করছে, নেতা-কর্মীদের মধ্যে আত”ঙ্ক সৃষ্টি করতে সম্প্রতি কয়েকটি স্থানে সংঘ”র্ষের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সরকারি দল কোনো হাম”লার কথা স্বীকার করছে না। তাদের দাবি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই সংঘ”র্ষে জড়িয়েছেন। আবার পরিস্থিতি বিভ্রান্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বিনা উ”/সকানিতে হামলা চালানো হচ্ছে।
এরই মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে যেখানেই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে সেখানেই বিএনপি-জামায়াত জোট প্রতিহত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে যুবলীগ। সংগঠনের নেতারা জানান, যারা নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠানে বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘আন্দোলন করতে চাইলে শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে আন্দোলন করো। আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করবেন না। মহাসড়ক কাউকে ইজারা দেওয়া হয় না। আপনারা খালি মাঠে প্রতিবাদ করবেন, আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বসে আঙুল চুষবেন, তা হবে না।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করতে কিছু লোককে মাঠে পাঠিয়েছে। আমরা দেখব কে কতক্ষণ থাকে। এখন তাদের অবস্থা আষাঢ়ের বুলি-গর্জনের মতো।
এর আগে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আরেকটি অনুষ্ঠানে সেতুমন্ত্রী কুমিল্লা ও মিরপুরে হামলার কথা স্বীকার করলেও দাবি করেন, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বিএনপি নিজেরাই হামলা করেছে। এ সময় তিনি দলের নেতাকর্মীদের সংঘাতে না জড়ানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে গত রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘বিএনপিকে হঠাৎ মাঠে দেখা যাচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা আছে। তারা গণতান্ত্রিকভাবে কর্মসূচি দিলে সরকারের কিছু বলার থাকে না। তবে যখনই অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর হবে তখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের উপযুক্ত জবাব দেবে।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপি বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজপথে উসকানিমূলক কর্মসূচি দিচ্ছে। সরকারকে সমস্যায় ফেলতে তারা আন্দোলনের নামে পুলিশের ওপর হামলা চালাচ্ছে। আন্দোলনের নামে বিএনপি রাজপথ দখলে এলে লড়াই করতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার মতো অবস্থান না থাকায় আগ্রা”সী রাজনীতি করছে। ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে বাঁচার চেষ্টা করছে। আমাদের আন্দোলনের জোয়ার সবে শুরু হয়েছে। এদিকে তাদের এই অবস্থা। এই জোয়ার যদি আরও বাড়ে? দেশের মানুষ তাদের সঙ্গে নেই। এ কারণে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ভুয়া মামলা দিয়ে টিকে থাকতে চায়। কিন্তু তারা সফল হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপি চরিত্রগতভাবেই দেশের মানুষের সঙ্গে ভাঁওতাভাজি করে আন্দোলন করার চেষ্টা করে আসছে। অতীতেও এটা করে তারা সফল হয়নি। এবারও তারা সফল হবে না। তাদের এই আন্দোলন দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গ্রহণ করছে না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি তাদের নিষ্ক্রিয় কর্মীদের শক্তিশালী করতে আন্দোলন করছে। আসলে আন্দোলন তাদের মূল লক্ষ্য নয়, তাদের লক্ষ্য নির্বাচন। আমি মনে করি তারা নির্বাচনে যাবে। আর রাজনীতি করতে বা সরকার গঠন করতে চাইলে নির্বাচনের মাধ্যমে আসতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে এই নেতা বলেন, ‘তাদের আন্দোলনে জোয়ার আসছে- এটা মোটেও সত্য নয়। আন্দোলনে বাধা নেই। বরং জনগণের সাড়া না পেয়ে ভিন্ন স্বার্থ হাসিলের জন্য আন্দোলনের নামে সহিং”/সতা করতে চায়। আমরা কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে চাই না। আমরা তাদের আন্দোলন বন্ধ করিনি। তারা আন্দোলনের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করছে। আর এমনটা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। তাদের ধ্বং”সাত্মক রাজনীতির বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে সচেতন করব।
উল্লেখ্য, সরকার বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে আন্দোলনে যদি কোনো ধরনের সহিং”/স ঘটনা ঘটে তবে আ.লীগের নেতাকর্মীরা চুপ করে বসে থাকবে না। মানুষের জীবন কিংবা সম্পদের ক্ষতি কোন ভাবে বরদাস্ত করা হবে না বলেও জানান নেতারা। এদিকে বিএনপি সাম্প্রতিক সময়ে লাঠিসোটা নিয়ে সমাবেশ করতে দেখা যাচ্ছে, যেটা এর আগে তেমন দেখা যায়নি।