ঘটনার সূত্রপাত রোডমার্চের আগের রাতে। ওইদিন সিলেটে আসেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল। রোডমার্চ সমাবেশ স্থল পরিদর্শন করতে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ও সিলেট বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি জানানো হয়নি ক’দিন আগে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদে অধিষ্ঠিত হওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। তাই সিলেট বিএনপির নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ মেয়র। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার বলয়ের শীর্ষ নেতারাও। ঘটনা সেখানেই শেষ। তবে আসশ ঘটনা সবার আঁড়ালেই থেকে যায়। সিলেট বিএনপির নেতারাও এ বিষয়ে নীরব।
তবে রোববার রাতে সিলেট নগর বিএনপির পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিএনপির সিনিয়র নেতা সালেহ আহমদ খসরু ও সাবেক কাউন্সিলর দিনার খান হাসুকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ প্রজ্ঞাপন নিয়ে সিলেট বিএনপিতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কারণ সালেহ আহমদ খসরু ও দিনার খান হাসু সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বলয়ের নেতা। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনোনীত করায় তারা দুজন নগরীর বিজয় মিছিলে নেতৃত্ব দেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন।
সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির বর্তমান ক্ষমতাসীন নেতারা চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা মুক্তাদিরের বলয়ের নেতা বলে জানা গেছে। ফলে এই বহিষ্কারাদেশের মধ্যদিয়ে সিলেট বিএনপিতে দৃশ্যমানভাবে কোন্দলে জড়ালো বিএনপি- এমনটি মনে করছেন বিএনপি’র অনেক নেতা। রোববার রাতে সিলেট নগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির ৪৯ নং কার্যনির্বাহী সদস্য সালেহ আহমদ খসরু ও ৪২ নং ওয়ার্ডের কার্যনির্বাহী সদস্য দিনার খান হাসুকে বিএনপি থেকে সাময়িক বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার ভৈরব থেকে শুরু হওয়া রোডমার্চের শেষ জনসভা ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। ওই জনসভার আগের দিন অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বর রাতে ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে যান রোডমার্চ দলের নেতা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল। এ সময় জেলা ও মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঠ পরিদর্শন শেষে কোনো কারণ ছাড়াই দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। যা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভাকে ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে মনে হয়।
এই কর্মকান্ডে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য আপনাকে সকল পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, কেন আপনাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা হবে না তার পক্ষে বক্তব্য থাকলে আগামী ৭ দিনের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরিত মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। চিঠিতে জানানো হয়, মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি সালেহ আহমদ খসরু ও দিনার খান হাসুকে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর কাছেও কপি পাঠানো হয়েছে।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ওইদিন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে দুই নেতা দৃষ্টিকটু আচরণ করে দলের মধ্যে শৃঙ্খলারও লঙ্ঘন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ পাওয়া দুই নেতাকে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এদিকে নগর বিএনপির এই বহিষ্কারাদেশ ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তোলপাড় সিলেট বিএনপি। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।বলয়ের নেতারা গতকাল তার সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টি জানান।
রণাঙ্গনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ দলের আরও ক্ষতি করবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এতে করে দল শক্তি সঞ্চয়ের চেয়ে দুর্বল হবে। তারা জানান, ওই দিন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে শীর্ষ নেতারাও তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ কারণে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারাও বিব্রত হয়ে পড়েন।
নগর বিএনপির সিনিয়র নেতা সালেহ আহমদ খসরু গনমাধ্যমকে বলেন, সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে তা গণমাধ্যমে দেখে অবাক হয়েছি। আমাকে এখনো কিছু বলা হয়নি। কেন তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমানের নির্দেশে সিলেট বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে বিক্ষোভ করলে এই বহিষ্কারাদেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। নিয়ম মানা হচ্ছে কি না সেটা ভাবার বিষয়। তিনি বলেন, জাতির ওপর বসে থাকা সরকারকে অপসারণের আন্দোলনে আমরা ঐক্যবদ্ধ। কোনো অশুভ শক্তি আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধা দিতে পারবে না।