বিএনপির সিনিয়র নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম) জেল থেকে বের হয়ে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে সারাদেশে শোরগোল ফেলেছেন। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন শাহজাহান ওমর। তবে ভবিষ্যতে বিএনপিতে ফেরার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘তওবা-আস্তাগফিরুল্লাহ’।
দীর্ঘদিনের দল বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়াকে ‘ডিগবাজি’ মনে করেন না এই নেতা। তার মতে, এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। ঈমান শুধু আল্লাহর উপর, বেঈমানি তো ধর্মের বিষয়। রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা বেঈমানি নয়।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টু রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
শাহজাহান ওমর বলেন, এটিকে ডিগবাজি বলে নাকি? এটি সাংবিধানিক অধিকার, আদর্শগত ব্যাপার। সবসময় সবখানে এডজাস্টমেন্ট করা সম্ভব নাও হতে পারে। আমি এই বৃদ্ধ বয়সে এসে মনে হলো জনগণের জন্য কাজ করি। কারণ, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমার রাজনীতি করে রুটি-হালুয়া লাগে না, আমার মন্ত্রী হওয়ার দরকার নেই। আমি সব হয়েছি, এই মাটি আমাকে সব দিয়েছে।
তিনি বলেন, একটা দল করা আমার সাংবিধানিক অধিকার। বড় বড় রাজনীতিবিদরাও দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে দল বদল করেছেন। আমি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ছিলাম, অফিসার হিসেবে শপথ নিয়েছিলাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় আগস্ট থেকে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি।
একাত্তরের রণাঙ্গনের এই বীর উত্তম বলেন, আমি বরিশাল বিভাগের অধিনায়ক ছিলাম। দেশের স্বার্থে আমি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ত্যাগ করেছি। কিন্তু যখন আমি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শপথ নিয়েছিলাম তখন আমি পাকিস্তানের নিকট অবিশ্বাসী হয়েছিলাম। কিন্তু দেশের মানুষের সাথে বেঈমানি করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য শেখ মুজিব সরকার আমাকে বীর উত্তম উপাধি দিয়েছিল।
সরকারের সঙ্গে আপস করে জামিন পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাশিমপুরে (কারাগারে) আপস করে কেমন করে। ২৯ নভেম্বর নরমাল প্রসেসে আমার জামিন হয়েছে। ৩০ নভেম্বর আওয়ামী লীগে জয়েন করেছি। জামিন আমার এমনিতেও হতো। ৪ নভেম্বর গ্রেফতার হয়েছি, ৬ তারিখে সুপ্রিমকোর্টে জামিনের জন্য আমার আইনজীবী আবেদন করেন। কিন্তু জামিন হলো না। পরের তারিখে গেলাম, তখন আমার আইনজীবী আদালতকে বললেন, সঙ্গে থাকা তিনজনকে জামিন হলো, আমাকে কেন দেওয়া হবে না? এ ছাড়া আমি চারবারের এমপি, বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। এজন্য আদালত আমাকে জামিন দিয়েছেন।
নাশ”কতার মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি বিএনপি ছেড়ে আসা শাহজাহান ওমর বলেন, মামলা হতেই পারে। ২৮ অক্টোবর ঘটনার দিন আমি মঞ্চে ছিলাম। এটা তো অস্বীকার করতে পারি না। তাই নাশকতার বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকতে পারে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট হলে পুলিশ আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট জারি করে আদালতে পাঠাবে।
ডিবি অফিসে যাওয়ার বিষয়ে শাহজাহান ওমর বলেন, আমি ব্যক্তিগত কারণে আদালত থেকে এখানে এসেছি। আগে বিএনপিতে কাজ করতাম, এখন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি। তারপর থেকে আমি সাইবার বুলিং এর শিকার। আমার সন্তান, স্ত্রী এমনকি আমার জুনিয়র আইনজীবীরাও ফোনের ওপর আছেন। আমি হারুন সাহেবকে (ডিবি প্রধান) বিষয়টি জানাতে এসেছি।