বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেকটা পরিবর্তিত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কারণ ইতিমধ্যে বিএনপি জোট থেকে সরে গিয়ে এককভাবে রাজনীতির মাঠে নামতে চাইছে। এদিকে বিএনপির নেতৃত্বে থাকা ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো নতুন করে জোট গঠন করছে। যার কারণে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হচ্ছে। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে না নামাতে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলগুলো। যেটার মাধ্যমে সমন্বয় থাকবে কতটুকু, সে বিষয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
কিছুদিন আগে এই জোটের কয়েকটি দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে নতুন কয়েকটি দল গঠন করে ৭ দলের ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। আর ১২টি দল মিলে ‘জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট’ গঠন করছে। বৃহস্পতিবার এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। চলতি মাসেই সাতটি নতুন দল নিয়ে ঘোষনা আসছে আরেকটি নতুন জোটর।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আর এখন নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন একটি সংবাদ মাধ্যমকে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “যে নতুন জোটের উদ্ভব হচ্ছে আমরা তাদের স্বাগত জানাই।” আমাদের সবার লক্ষ্য একই। আমরা আলাদা আলাদা প্লাটফর্ম থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করব। সবার উদ্দেশ্য সরকারের পতন।
বৃহস্পতিবার যে জোটের আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট’ ১২টি সমমনা দল নিয়ে এই জোট গঠিত হচ্ছে বিএনপি ছাড়াও ২০ দলীয় জোটে যুক্ত সব দল। ৩০ ডিসেম্বর নতুন জোট গঠন করছে ৭টি সমমনা দল। তবে এসব জোটের কোনোটিতেই নেই প্রধান শরিক বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি।
যে দলগুলো নতুন জোটে যাচ্ছে
নতুন এই জোটের দলগুলো হলো- মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল, কে এম আবু তাহেরের নেতৃত্বে এনডিপি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে এলডিপি (একাংশ), অ্যাডভোকেট জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট, নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, অ্যাডভোকেট আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা, একাংশ)৷
এই জোটের নেতৃত্বে থাকবেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক। শাহাদাত হোসেন সেলিম মিডিয়া বিষয়ক সমন্বয় করবেন
নতুন জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে মুখপাত্র মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক বলেন, আমরা ১২টি দল নিয়ে এই জোট গঠন করতে যাচ্ছি। বৃহস্পতিবার, ইনশাআল্লাহ, আমরা জোটের নাম ঘোষণা করব আমরা সবাই যুগপৎ আন্দোলনে অবদান রাখব। কিন্তু সেটাকে আরও সুসঙ্গতভাবে করার জন্য একতাবদ্ধ হতে চাচ্ছি৷ মূল লক্ষ্য যুগপৎ আন্দোলন, শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পতনের আন্দোলন আমাদের মূল লক্ষ্য। বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা রূপরেখার সাথে একমত। আমাদের সকলের লক্ষ্য এক এবং একই থাকবে।
জানা গেছে, সম্প্রতি গঠিত গণতন্ত্রের মঞ্চের আদলে চলমান যুগপৎ আন্দোলনে সবাই পৃথক পর্যায় থেকে অংশ নেবেন ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত হয়ে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে এই দুই জোট গঠন করা হচ্ছে। নতুন কৌশল হিসেবে বিএনপির ‘সবুজ সংকেত’ জামায়াতে ইসলামীকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই তারা এই কৌশল নিয়েছে, সে লক্ষ্যে বিএনপি একক প্লাটফর্ম থেকে আন্দোলন করছে, কোনো জোট আন্দোলন হচ্ছে না। দলটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নতুন জোট গঠন করা হয়েছে, সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী জোট গড়ছেন। তবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করতে রাজি নয় অন্য দলগুলো।
আসছে নতুন ২০ দলীয় জোট
জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটের সাতটি দলের মধ্যে আলাদা জোট গঠন নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এই জোটের সম্ভাব্য শীর্ষ নেতা ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বৃহস্পতিবার ১২ দলীয় জোটের আত্মপ্রকাশের পর এই জোটের নাম ও তারিখ চূড়ান্ত করা হলেও প্রাথমিকভাবে ৩০ ডিসেম্বরকে মাথায় রেখেই এগোচ্ছে তারা।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির পাশাপাশি থাকছে অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, সাদেক শাওনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ, খন্দকার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা, একাংশ), অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী), সাইফুদ্দীন মনির নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) ও অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ পিপলস লীগ৷
বিএনপির এই জোটের রাজনীতিকে আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির প্রধান এখন কে? চুরি-ডাকাতির মামলায় আদালত তাকে সাজা দিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ এখন তাদের কথা ভাবে না। তারা যে ২৭ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছে, তা হাস্যকর। যে দল নিজেদের সংস্কার করতে পারে না, তারা রাষ্ট্রের সংস্কার করবে কিভাবে? তারা দেশ থেকে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। ফলে তারা ক্ষমতায় এলে আবারও দেশে লুটপাটের রাজনীতি করবে এবং তাদের সঙ্গে যারা আছে, আওয়ামী লীগ তাদের দল মনে করে না।
এদিকে আগামী ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। তার সাথে যোগ হচ্ছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। জানা গেছে, বিএনপিসহ বাংলাদেশের আরো ৩৬ টি রাজনৈতিক দল একসাথে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামবে। তারা চারটি মঞ্চের মাধ্যমে আলাদা আলাদা সংগঠন করবে, বলে সূত্রে জানা গেছে। এদিকে বিএনপি অন্যান্য যে সমস্ত কর্মসূচি গ্রহণ করবে সেখানেও অভিন্নভাবে রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি পালন করবে।