রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে বিপাকে পড়েছেন ওই দেশগুলোতে অবস্থানরত বেসামরিক নাগরিক সহ ভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা। বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক তাদের নিজদেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন ভিনদেশে। ইউক্রেনে অবস্থানরত প্রবাসীরা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে। তবে অনেকেই ফিরতে চাইলেও ফিরতে পারছেন না। নিজদেশ থেকে অন্যদেশে পাড়ি জমানোর অভিজ্ঞতাও অনেকের কাছেই ছিল অপ্রত্যাশিত। এমনি ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশি ( Bangladeshi ) প্রবাসীর অন্যদেশে পাড়ি জমানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার, 25 ফেব্রুয়ারি, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্র /মণের পরের দিন, মেহেদী হাসান মোহনের ( Mehedi Hasan Mohan ) মেয়ে লিলিয়া মেহেদীর প্রথম জন্মদিন ছিল। মেয়ের প্রথম জন্মদিনে এক জোড়া কানের দুলও কিনেছিলেন তিনি। বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলছিল।
কিন্তু আগের দিন বাংলাদেশ সময় সকাল ( morning ) ৯টায় রাশিয়ার হামলায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সপরিবারে বসবাস করছিলেন মোহন।
নিজের জীবন বাঁচাতে মেয়ের জন্য কেনা কানের দুলও নিতে পারেননি। সবকিছু পেছনে ফেলে শুক্রবার ইউক্রেনের স্থানীয় সময় দুপুর ( Noon ) ২টায় একটি গাড়িতে পরিবারের সঙ্গে পোল্যান্ডের ( Poland ) উদ্দেশে রওনা হন মোহন। সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু আব্দুল ( Abdul ) আউয়াল, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান।
মোহন যশোরের মনিরামপুর ( Monirampur Jessore ) উপজেলার সাতগাতি গ্রামের প্রয়াত. মহিউদ্দিনের ( . Mohiuddin ) ছেলে মো. ( Md. ) তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনে সপরিবারে বসবাস করছেন।
সীমান্ত অতিক্রম করার কঠিন সময় সম্পর্কে বিশদভাবে, মোহন যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছিলেন যে তিনি পোলিশ সীমান্তে পৌঁছানোর জন্য কোভেল ( Cowell ) শহর পেরিয়ে 16 ঘন্টা ধরে গাড়ি চালিয়েছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী তানিয়া সুলতানা। এই ১৬ ঘন্টার মধ্যে টয়লেট এবং গাড়িতে তেল নিয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি। আসার আগে কিছু কাপড় ও শুকনো খাবার নিয়ে এলেন। কিছু কিছু সময় মনে হয়েছিল এই বুঝি সব শেষ। তারা চরম ভয়ে ভয়ে কাটাছিল সারা পথ।
সীমান্ত সড়কে হাজার হাজার যানবাহন ছিল। মাত্র ৬ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লেগেছে ৩ দিন। শিশুদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তারা। যানজটে কিছু লোক গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় হাঁটলেও অনেকে গাড়ির ভেতরে। সবাই খুব কাছাকাছি কিন্তু কেউ কথা বলছে না। চখ মুখে শুধু হতাশা । বাড়ি, গাড়ি, সম্পদ সবই কিয়েভে পড়ে আছে। তিনি মনে করেন বেঁচে থাকাই চূড়ান্ত নিয়তি।
তিনি ইতিমধ্যে শুনেছেন যে আপনার কাছে পাসপোর্ট এবং গাড়ির কাগজপত্র থাকলে আপনাকে পোল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
ভয়াবহ যানজট যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। তবে পোল্যান্ড সীমান্তে সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাস খাবার-দাবারসহ সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে। এছাড়া ডকুমেন্টস ট্রাভেল পাসসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়েছে।
তার গাড়িটি সীমান্তে রেখে তিনি পোলিশ সীমান্তে আগে থেকেই পার্ক করা দূতাবাসের গাড়িতে উঠে আবার হাঁটতে শুরু করেন। পোল্যান্ডে দুইদিন অবস্থানের পর তারা সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হন। ৩ মার্চ, তারা চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রান্তে পৌঁছেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের বাসটি আগে থেকেই সেখানে দাঁড় করানো ছিল।
৫ মার্চ তারা সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে পৌঁছান। অচেনা শহরে বেঁচে থাকার জন্য আবার নতুন কিছু করার চেষ্টা করছেন তিনি। মোহন ও তার পরিবার সবার কাছে দোয়া কামনা করেছেন।এদিকে রুশ আগ্রাসনের প্রথম দিন থেকেই মোহনের মা লিলি বেগম ও বাংলাদেশে তার ভাইবোনেরা চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। তারা তাদের সন্তান, নাতি-নাতনি এবং নাতি-নাতনিদের চিন্তায় খাওয়া-দাওয়া করে।মোহনের মা লিলি বেগম বলেন, শুনেছি মোহন পরিবার নিয়ে সুইজারল্যান্ডে নিরাপদে আছেন। এই খবর পাওয়ার পর এখন তাদের পরিবারের লোকেরা একটু সস্তি পেয়েছেন। তিনি প্রবাসে তার জামাই ও নাতনির জন্য সবর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, রাশিয় ইউক্রেন ইস্যুতে অনেক দেশ বেসামরিক নাগরিকদের উদ্ধার করার কাজ করে যাচ্ছে। ইতি মধ্যেই অনেক ইউক্রেনে বসবাসরত অনেক প্রবাসী ও বেসামরিকদের ভিন্ন ভিন্ন দেশগুলোতে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন উদ্ধারকারীরা। তবে এখনো পর্যন্ত অনেক প্রবাসী ও বেসামরিক নাগরিক ইউক্রেনেই আটকে আছে তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারীরা।