‘এখন থেকে তাহলে বাসে ওঠার আগে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে নিতে হবে। সিলিন্ডার লাগানো নাকি ডিজেলে চলছে, সেটা দেখে নেওয়ার পরই তাহলে বাসে চড়তে হবে- ঠাট্টা করেই এমন কথা বললেন আশরাফ হোসেন নামের একজন চতুর যাত্রী। আজ (সোমবার) অর্থাৎ ৮ নভেম্বর দুপুরের দিকে গাবতলীতে একটি বাসে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া বৃদ্ধি করার দাবিতে ধর্মঘট করেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। গতকাল (রবিবার) অর্থাৎ ৭ নভেম্বর বিআরটিএর সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে ভাড়া বৃদ্দি করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। সভায় আরও বলা হয়, যে সকল বাস কিংবা মিনিবাস সিএনজিতে চলে সেগুলোর ভাড়া বাড়ানো হয়নি, তাই এসব পরিবহনে নতুনভাবে নতুন করে ভাড়া আদায় করা যাবে না।
তিন দিন ধরে যাত্রীদের ভো’গান্তির পর আজ সোমবার সকাল থেকে দূরপাল্লাসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল করছে। বাসের যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, গ্যাসচালিত গাড়িতেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। গাবতলী থেকে আসা আশরাফ নামের এক যাত্রীকে মিডিয়া পারসন হিসেবে পরিচয় দিয়ে তামাশা করছিলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমি কী করে বুঝব কোনটা ডিজেল আর কোনটা গ্যাস? সব কার বোঝার উপায় কী? আর সবাই কি বুঝবে? আসলে সব দুর্ভো’গ আমাদের সাধারণ মানুষের। ‘
এবার তার সঙ্গে যোগ দিলেন বাসের অপেক্ষায় থাকা আরেক যাত্রী শহীদ। আশরাফের কথা রেশ ধরেই তিনি বলেন, ‘সব দায় আমাদের জনগণেরই। বাসে ওঠার আগে জিজ্ঞেস করতে হবে— সিএনজি না ডিজেল? বাসের ভেতর থেকে তো বোঝার কোনও উপায় নেই। বাসের সুপারভাইজার কিংবা হেলপার যা বলবে আমাদের তাই মেনে নিতে হবে।’
বাসের চালকরাও বলছেন, বাইরে থেকে বোঝার কোনও উপায় নেই বাসটি সিএনজিচালিত না ডিজেল চালিত। বাসের পেছনের নিচের অংশে সিলিন্ডারের উপস্থিতি থাকলে বুঝতে হবে সেটা সিএনজিচালিত। এছাড়া চালকের পাশে একটি মিটার থাকে, সেটা দেখেও বোঝা যায়। তবে সাধারণ যাত্রী হিসেবে সবাই এ বিষয়টি বুঝতে পারবেন না। বিষয়টি বুঝতে চালক কিংবা হেলপারের বা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নিতে হবে।
যাত্রীরা কীভাবে সিএনজিচালিত বাস চিনবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে সরাসরি কোনও মন্তব্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, বিষয়টি দেখভালের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটগণ অভিযান পরিচালনা করবেন। কোনও অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীতে চলা ২৫টি কোম্পানির বাসের মধ্যে ২০ কোম্পানির বাস সিএনজিতে রূপান্তর করা। তথ্যে দেখা গেছে তখনই ছিল শতকরা ৮০ ভাগ বাস সিএনজিতে কনভার্ট করা । এ সংখ্যা বর্তমানে আরও বেড়েছে বলে আমাদের ধারণা। আর পরিবহন মালিকরা পরিবহন সেবা নয়, পরিবহন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা কৌশলী হবেই সেইসাথে বিআরটিএ কে আরো কৌশলী হতে হবে। এছাড়া বাসের ভিতরে ভাড়ার চার্ট টাঙ্গানোর সাথে সাথে বাসটি ডিজেলচালিত না সিএনজিচালিত তার তথ্য রাখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
ধর্মঘটের সময় ডিজেল চালিত বাসের পাশাপাশি গ্যাসচালিত বাসের মালিকরাও তাদের বাস বন্ধ রাখতে দেখা যায়। তারা (গ্যাসচালিত বাস মালিকরা) কেন এমন করলেন জানতে চাইলে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান দেশের একটি জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকাকে বলেন, তারাও ভু/ক্তভো’গী। তারা পরিস্থিতির শিকার। মহানগরীতে যত বাস ও মিনিবাস চলাচল করে তার এক থেকে দুই শতাংশ সিএনজি চালিত বলেও দাবি করেন পরিবহন মালিকদের এই নেতা।
সাইফুল নেওয়াজ যিনি বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে রয়েছেন তিনি ঐ অনলাইন পত্রিকাকে বলেন, “ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারনে যারা পরিবহন মালিক তারাও ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার সুর তুলেছেন এটা একধরনের সুবিধা আদায়। যেটা প্রকৃতপক্ষে জো’র করে আদায় করে নেওয়ার মতো। এর ফলে সাধারন জনগণকে ভো’গান্তিতে পড়তে হবে। কোনো ধরনের কার্যকরী যৌক্তিকতা নেই এই ধরনের ভাড়া বাড়ানোর।