বিয়ে না করে বহির্বিশ্বে একজন যুবক- যুবতী একসাথে বসবাস করে যার নাম দেয়া হয়েছে লিভ টুগেদার। তবে এটা শুধু বহির্বিশ্বে সীমাবদ্ধ নয় বাংলাদেশ এমন অনেক তরুণ-তরুণী আছে যারা লিভটুগেদারে আসক্ত হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা সন্ধান মিলেছে সাভারের আশুলিয়ায়।
সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, আলী নূর বিশ্বাস ও অহিনা খাতুন বিয়ে না করে তিন বছর ধরে বিভিন্ন বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ভাড়ায় বসবাস করছিলেন। সম্প্রতি গ্রামের বাড়িতে বিয়ের কথা শুনে রাগে আলী নূরকে লাঠি দিয়ে কুপিয়ে হ/ ত্যা করেন অহিনা খাতুন।
সাভারের আশুলিয়ায় নির্মম হ/ ত্যা মামলার প্রধান আসামি অহিনা খাতুনকে (২৯) নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। সেই সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মঙ্গলবার (০৩ আগস্ট) বিকেলে র্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব।
নি/ হত আলী নূর বিশ্বাস মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার হোগলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। চাকরির সন্ধানে ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে প্রথমে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিছুদিন পর অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন। অভিযুক্ত অহিনা খাতুনের জবানবন্দিতে বলা হয়, প্রায় তিন বছর আগে ভিকটিমের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে দুজনেই একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
এ অবস্থায় তারা বিয়ে না করে নিজ নিজ পরিবারকে না জানিয়ে আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকেন। এই তিন বছরে তারা পাঁচবার বাড়ি বদল করেছে।
আরও জানা যায়, হ/ ত্যার শিকার আলী নুর বিশ্বাস জুলাই মাসের শুরুতে কয়েকদিনের জন্য মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার গ্রামে গেলে অহিনা খাতুন জানতে পারেন ভিকটিম অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছেন। 14 জুলাই গ্রামের বাড়ি। পরে আলী নূর 17 জুলাই ঢাকায় ফিরে আসেন। আলী নূরের বিয়ের কথা জানতে পেরে অহিনা রাগ ও প্রতিশোধ অনুভব করে।
গোপনে আলী নূরকে হ/ ত্যার পরিকল্পনা করেন। তাদের মধ্যে বিরোধ অব্যাহত থাকলেও গত ২৯শে জুলাই আশুলিয়ার জিরাবো স্বামী-স্ত্রী হওয়ার ভান করে নামাপাড়া এলাকার দেলোয়ার বেপারীর টিনশেড বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস শুরু করে। 30 জুলাই রাতের খাবার খেয়ে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে। ভোররাতে আলী নূরকে ঘুমন্ত অবস্থায় ব্যাট দিয়ে মাথা, গলা ও বুক কেটে নির্মমভাবে হ/ ত্যা করে অহিনা খাতুন।
আসামির বক্তব্যের ভিত্তিতে র্যাব আরও জানায়, অহিনা খাতুন রক্তাক্ত লাশ দেখে ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে রাখে। হ/ ত্যার পর সে তার থালা-বাসন, জামাকাপড় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বস্তায় ভরে সকালে ঘরে তালা দিয়ে বস্তা নিয়ে প্রথমে জিরাবো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যায়। সেখান থেকে বাসে করে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় আসেন।
সেখানে অহিনা নিজেকে চাকরিপ্রার্থী গার্মেন্টস কর্মী পরিচয় দিয়ে মজিবুরের সহায়তায় 2200 টাকা ভাড়ায় টিনের ছাউনির ঘরে ভাড়াটিয়া হিসেবে আত্মগোপন করে। বিবেকের তাড়নায় গত ৩১ জুলাই বিকেলে আলী নূরের শ্যালক জাকিরকে আলী নূরের মোবাইল ফোনে জানান, আলী নূর অসুস্থ, তার পরিবারকে জিরাবো এলাকার দেলোয়ার বেপারীর টিনশেড ভাড়া বাসায় যেতে হবে। তাকে বাঁচাতে খবর পেয়ে গত ১লা আগস্ট ভিকটিম পরিবারের সদস্যরা জিরাবোর টিনশেডের ঘরে গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। বাড়ির মালিক ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তারা জানালা খুলে ঘরের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ নিয়ে মেঝেতে নি/ হত আলী নূরের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।
পুলিশকে খবর দিলে আশুলিয়া থানা পুলিশ কক্ষের তালা ভেঙ্গে কক্ষের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করে। ঘটনাটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। পরে ময়নাতদন্ত ও ময়নাতদন্ত শেষে নি/ হতের বড় ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ২ আগস্ট হ/ ত্যা মামলা দায়ের করেন।এর পর আসামিদের গ্রেপ্তারে ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব-৪। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অহিনা খাতুনকে আটক করে র্যাব সদস্যরা।
র্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান জানান, আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আসামি নীলফামারীর একটি স্কুল থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ২০১২ সালে মিজানুর রহমানের সাথে তার প্রথম বিয়ে হয়, কিন্তু পারিবারিক কলহের কারণে দেড় বছর পর তাদের বিচ্ছেদ হয়। ওই পরিবারে তার ১টি ছেলে রয়েছে। পরে সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে ২০১৮ সালে ঢাকায় এসে আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। চাকরির মাধ্যমে ভিকটিম আলী নূরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখান থেকেই তাদের সম্পর্কের সূত্রপাত এবং শেষ পর্যন্ত অহিনা খাতুন তাকে হ/ ত্যা করে। আসামিদের আশুলিয়া থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।
এ ঘটনার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ভুক্তভোগির পরিবার। তারা আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে । এলাকাবাসীর কাছে এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, তারা উভয়েই দীর্ঘদিন যাবত এই কলোনিতে বসবাস করে আসছিলেন। কোন ভাবেই বোঝা যায়নি তারা অবিবাহিত অবস্থায় এখানে অবস্থান করছে। সব সময় তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো চলাফেরা করত । এমন একটি ঘটনা ঘটে যাবে এটা আসলেই অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা আসল অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই ।