পদ্মা সেতু নির্মাণ করাতে বাংলার মানুষের মনে মিলেছে সুবিশাল শান্তি। পদ্মা সেতু মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হওয়াতে বাংলার মানুষ অত্যন্ত প্রফুল্লিত ও আনন্দিত। কয়েকদিন আগে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেবার পর বেপরোয়া চালাবার জন্য ঘটলো মটরসাইকেল দুর্ঘটনা।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু যেদিন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়, সেদিন রাতেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়। বেপরোয়া গতিকে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে সমালোচনা করছেন সবাই। এরপর একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। দেখা যায়, বাইকের গতি ছিল ঘণ্টায় ১০৫ কিলোমিটার। কিন্তু নতুন আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, শুধু দ্রুতগতিতে নয়, প্রাইভেট কার থামিয়ে সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য পদ্মা সেতুতে অকালে ঝরে পড়ে দুটি প্রাণ।
সেতু উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিন রোববার (২৬ জুন) রাতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার নতুন ভিডিও প্রকাশ করা হয়। আর তা নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
স্বপ্নের সেতু পদ্মা বাঙালিকে আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়ে দিলেও এরই মধ্যে জন্ম দিয়েছে বিষাদ। উদ্বোধনের পরের দিন, দুই যুবককে বাইকে করে সেতু পার হতে হয় এবং করুণ পরিণতির শিকার হতে হয়। দ্রুতগামী বাইক থেকে পড়ে আলমগীর ও ফজলু নামে দুই যুবক গুরুতর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার পর থেকে দোষ চাপানো হচ্ছে নিহত দুই যুবকের ওপর। বাইকটি দ্রুত গতিতে থাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন বলে জানা গেছে।
তবে ৭ দিন পর দুর্ঘটনার নতুন ভিডিও পাওয়া গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের স্লো মোশন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে দুটি বাইক একটি ব্যস্ত রাস্তায় চলছে৷ দুটি বাইকের ডানদিকে একটি কাভার্ড ভ্যান এবং বামদিকে একটি প্রাইভেট কার চলছিল। প্রথম বাইকটি একই গতিতে এগিয়ে যেতেই সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। প্রথম বাইকটি সংঘর্ষের পর নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হলেও দ্বিতীয় বাইকটি দুর্ঘটনায় জড়িত তিনজনকে বাঁচাতে উল্টে যায়। অকালে প্রাণ হারান আলমগীর ও ফজলু।
বাইক দুর্ঘটনার নতুন ভিডিও প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য ব্যস্ত সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলাকে দায়ী করা হচ্ছে।
প্রয়াত আলমগীর ও ফজলু ঢাকার নবাবগঞ্জের বাসিন্দা। আলমগীর পেশায় একজন মোটরসাইকেল মেকানিক এবং ফজলু ছিলেন প্রবাসী। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর তারা তিন বন্ধুর সঙ্গে তিনটি মোটরসাইকেলে বেড়াতে গিয়েছিল। গত শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। ওই দিন জনসাধারণকে প্রবেশ নিষেধ থাকলেও পরদিন সকাল থেকে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। রোববার (২৬ জুন) রাতে সেতুর পিলারের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু প্রয়াত হন।
মোটরসাইকেল চালানোর সময় যে ভিডিও করা হয় তাতে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন আলমগীর আর পেছনে বসে ভিডিও করছিলেন ফজলু। অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সব গাড়িকে ওভারটেক করেন তারা। সেতুর ওপর ৬০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর নির্দেশনা থাকলেও তারা তা ভঙ্গ করে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। ধীরে ধীরে মোটরসাইকেলের গতি ৯০, ৯৫, ১০০ থেকে ১০৫ পর্যন্ত ওঠতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর সেই গতি কমে নেমে আসে ৭০-এ। এরপরই হঠাৎ ডানে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাকের সামনে পড়ে যায়। এতে গুরুতর আহত হন চালক ও আরোহী। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়। রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, বেপরোয়া মটরসাইকেল চালানোর কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রত্যেক বছর হাজার হাজার মানুষ প্রয়াত হচ্ছেন। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী। তাই ধীরে মটরসাইকেল চালিয়ে গন্তব্যেস্থলে যাওয়াই ভালো। পরিবারের কথা একবার হলেও ভাবা উচিত। কেননা সন্তান হারানোর যে কতটা কষ্ট সেটা বাবা মা ছাড়া কেউ জানেনা।