Friday , January 10 2025
Breaking News
Home / Countrywide / বাবুলের কারাগার কক্ষে তল্লাশি নিয়ে শেষ পর্যন্ত সরব সেই ওসি নিজাম, জানালেন সত্যিটা

বাবুলের কারাগার কক্ষে তল্লাশি নিয়ে শেষ পর্যন্ত সরব সেই ওসি নিজাম, জানালেন সত্যিটা

গেল বেশ কিছু দিন ধরেই একটি বিষয় নিয়ে সারা দেশে সৃষ্টি হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা। চট্টগ্রামের আলোচিত হ’ত্যা মামলার আসামি বাবুল নিয়েই এই আলোচনা সমালোচনা তৈরী হয়েছে। জানা গেছে ফেনী জেলা কারাগারে আটক সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার কারাগারে তার সেল তল্লাশির অভিযোগ করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ফেনী সদর মডেল থানার ওসি এমন কাজ করেছেন। নিজাম উদ্দিন অবশ্য ওসি মো. নিজাম উদ্দিনের দাবি, বাবুল আক্তার ফেনী কারাগারে আছেন তা তিনি জানতেন না। এই অভিযোগ খণ্ডন করতে তিনি পুরো কারাগারের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার দাবি জানান।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি বলেন, বাবুল স্যার ফেনী কারাগারে আছেন তা জানতাম না। রোববার গণমাধ্যমে খবর আসার পর বিষয়টি জানতে পারি। আইনত কোনো পুলিশ কর্মকর্তা আদালতের অনুমতি ছাড়া আসামিকে কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন না।

তিনি বলেন, ডাকাতি মামলার এক আসামির খোঁজ নিতে কারাগারে গিয়েছিলাম। আমি জেলসুপার স্যারের রুমে মাত্র ৫-৬ মিনিট ছিলাম। পুরো কারাগার সিসিটিভির আওতায় রয়েছে। ভেতরে ও বাইরে সিসিটিভি রয়েছে। কারাগারের বাইরেও সিসিটিভি রয়েছে। এসব ফুটেজ পর্যালোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

ফেনী সদর থানার ওসি বলেন, সম্প্রতি আমাদের এলাকায় ডাকাতদের আনাগোনা বেড়েছে। ডাকাতি প্রতিরোধ ও নির্মূলের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে একটি ডাকাতি মামলার আসামিদের সম্পর্কে তথ্য পেতে জেলখানায় গিয়েছিলাম। ফেনী এলাকায় এক ডাকাত সম্পর্কে তথ্য পেতে মো. ডাকাত এর আগে গ্রেফতার হয়ে জেলে যায়। তিনি জামিনে আছেন নাকি কারাগারে আছেন তা নিশ্চিত করতে আমি কারাগারে গিয়েছিলাম।

অপরদিকে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার বলেন, ওসি নিজাম উদ্দিন তার কক্ষ তল্লাশি করেন। সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে তার আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ এ অভিযোগ দায়ের করেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছার আদালতে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন বাবুল আক্তার জেলকোডের বিধান লঙ্ঘন করে কক্ষে তল্লাশি চালান। বাবুল আক্তারকে রিমান্ডে নিয়ে পিবিআই প্রধানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ৬ জনের প্ররোচনায় ও নির্দেশে ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন জেলকোডের বিধান উপেক্ষা করে ফেনী কারাগারে প্রবেশ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বাবুল আক্তারের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে তার জীবন নষ্ট করার চেষ্টা করে। তার কারাগারে প্রবেশের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।

আবেদনে তার আইনজীবী বলেন, জেলা কোড অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও আদালতের লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কারাগারে প্রবেশ করতে পারবেন না।

এ বিষয়ে বাবুল আক্তারের আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ বলেন, পিবিআই প্রধানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর বাবুল আক্তারকে মানসিক চাপে রাখতে মরিয়া আসামিরা। আশ্চর্যের বিষয় যে, একজন পুলিশ অফিসার আদালত ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত অনুমতি ছাড়াই কারাগারে প্রবেশ করে একজন বন্দীর সেল তল্লাশি করে। পুরো বিষয়টি ফেনী জেলা কারাগারের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করলে ঘটনা সম্পর্কে সহজে জানা যায়।

তিনি বলেন, আদালতের অনুমতি ছাড়া একজন হাজতির কক্ষে প্রবেশ করা জেল কোড অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা আদালতকে বিষয়টি জানিয়েছি। এখনো আদেশ দেননি। আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

এর আগে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত ৮ সেপ্টেম্বর একই আদালতে আরেকটি মামলার আবেদন করেন বাবুল আক্তার। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।

ওই মামলায় পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার এসপি মোঃ নাজমুল হাসান, মেট্রোর এসপি নাইমা সুলতানা, খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা, সিএমপি ডিবি বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার একেএম মহিউদ্দিন সেলিম ও পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবিরকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় নির্যাতন ও হেফাজতে মৃ’ত্যু’ (প্রতিরোধ) আইন, ২০১৩ এর ১৫ (১) ধারা এবং প্রাসঙ্গিক আইনের ৫(২) ধারার অভিযোগ করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুল বাসে নামানোর পথে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে গুলি করে ও ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। সে সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার ঢাকায় ছিলেন। ঘটনার পর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হ’ত্যা’ মামলা করেন।

পরে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় পিবিআই তার স্ত্রী হ’ত্যা’র সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করে। এরপর গত বছরের ১২ মে আগের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। একই দিন মিতুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় আরেকটি মামলা করেন।

আর সেই দিনই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয় বাবুলকে। সেই থেকেই কারাগারে রয়েছেন এক সময়ের দাপুটে এই পুলিশ অফিসার।

About Rasel Khalifa

Check Also

কৃষকদল নেতার জুয়ার আসরে অভিযান, আইনজীবী-কাউন্সিলরসহ গ্রেপ্তার ৯

ময়মনসিংহে এক জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে আইনজীবী ও কাউন্সিলরসহ ৯ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *