Tuesday , December 24 2024
Breaking News
Home / National / বাবা সৌদি প্রবাসী, ১৯ বছর বয়সে প্রতারণার হাতেখড়ি তার

বাবা সৌদি প্রবাসী, ১৯ বছর বয়সে প্রতারণার হাতেখড়ি তার

নওশীন তাবাসসুম। বয়স 22 বছর। পরিবারটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর হালিশহরে থাকে। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি স্থানীয় কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। চুদির মেলা নামের ফেসবুক পেজে ভারত থেকে চুড়ি বিক্রির নামে চলছে তার প্রতারণা। 19 বছর বয়সে, তিনি কলেজে পড়ার সময় প্রতারণা করেছিলেন। বাবা সৌদি প্রবাসী। অল্প বেতনে চাকরি করেন। চুড়ির মেলা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে কয়েক বছরের মধ্যে আলাদিনের প্রদীপ পান এই শিক্ষার্থী। তার পেইজের হাজার হাজার ফলোয়ার রয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অর্থ বিনিয়োগের জন্য পোস্ট খুলুন। যার মাধ্যমে তার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেক প্রবাসী নারী, আইনজীবী, শিক্ষার্থী, গৃহিণী। মা-ভাই-বোনসহ স্বজনরা তার প্রতারণার রসদ জোগাচ্ছেন। অনেক সময় পাওনা টাকা চাইতে গেলে জাল চেক দিয়ে প্রতারণা করে। কখনও মামলার ভয় পাবেন না। এ পর্যন্ত নওশীনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন ৮০ জনেরও বেশি মানুষ। চট্টগ্রামের শাহনাজ আক্তার মণি নামে এক আইনজীবীর কাছ থেকে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা চুরি করেন তিনি। পরে অনলাইন ব্যবসার লভ্যাংশসহ বকেয়া টাকা চাইলে ওই শিক্ষার্থী থানায় মামলা দায়ের ও বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে সম্প্রতি রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন আইনজীবী। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছেও সহযোগিতা চেয়েছেন। এর আগে বকেয়া টাকা চেয়ে নওশীনের চট্টগ্রামের ঠিকানায় আইনি নোটিশ পাঠান তিনি। কিন্তু অভিযুক্ত কলেজছাত্রী তা মানেননি। থানায় রাখা সাধারণ ডায়েরিতে শাহনাজ আক্তার মনি বলেন, আমার ছোট বোনের বান্ধবীর মাধ্যমে নওশীনের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে তিনি তার ফেসবুক পেজ ‘চুরির মেলা’র মাধ্যমে জুয়েলারি ব্যবসার কথা বলেন। তিনি মৌখিকভাবে বলেছিলেন যে তিনি যদি তার ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন তবে তিনি সঠিকভাবে লভ্যাংশ ব্যাখ্যা করবেন। তার কথায় বিশ্বাস করে, ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য ২৬শে জুন ২০২২ থেকে গত বছরের ৬ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে ৮ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। আমার কাছ থেকে তার মায়ের ব্র্যাক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয়েছিল – অ্যাকাউন্ট নম্বর 110310315840001। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর তারা আমাকে কোনো লাভ না দিয়ে কেটে দেয়। ৮ ফেব্রুয়ারি ফোনে টাকা চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। নওশীন যে কোন সময় আমার ও আমার পরিবারের বড় ক্ষতি করতে পারে। বর্তমানে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। আইনজীবী শাহনাজ আক্তার মনির স্বামী বলেন, আমার স্ত্রীর কষ্টার্জিত টাকা এই প্রতারক নারী আত্মসাৎ করেছে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক লোকের কাছ থেকে নওশীনের প্রতারণার অভিযোগ আমরা পেয়েছি।

তার মামলার হুমকি ও ভয়ে এখন পর্যন্ত কেউ আইনি ব্যবস্থা নিতে সাহস পায়নি। এখন আমরা ভুক্তভোগী সবাই সম্মিলিতভাবে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়ে আমি ইতিমধ্যে ঢাকার মিন্টো রোডে অবস্থিত গোয়েন্দা অফিসে অভিযোগ দিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আরেক ভুক্তভোগী ফারিসা তারান্নুম বলেন, গত নভেম্বরে দেশে গিয়েছিলাম। 7ই ডিসেম্বর, আমি ‘চুড়ি মেলা’ পাতায় কয়েক সেট চুড়ির জন্য রুপিতে অর্ডার দিয়েছিলাম। 2800. পরে সে তার ফেসবুক পেজে টাকা বিনিয়োগের জন্য আমাকে প্রভাবিত করতে থাকে। অর্ডার করা চুড়ি না পেয়ে হতাশ হয়ে আমেরিকা ফিরে এলাম। চুড়ি বুঝলে হয়তো তার পাতায় মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতাম। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে, অভিযুক্ত নওশীন প্রকাশ্যে টাকা বিনিয়োগের জন্য তার পেজে পোস্ট দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শাহরিশ মিম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, নওশীন আমাকে ইনবক্স করেন ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগের জন্য। প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হবে বলে জানান। আমি গ্যারান্টি চাইলে তিনি আমাকে একটি স্ট্যাম্প দেখিয়ে বলেন, স্ট্যাম্পে লিখে টাকা নেওয়া হবে। কিন্তু তার ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখি অনেকেই তাকে প্রতারক বলছেন। এটা দেখে আর টাকা দিলাম না। তাহমিনা আলম নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, তারা আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন এবং গত ৫ মাস ধরে কোনো লভ্যাংশ বা মূলধন পরিশোধ করছেন না।

ভুক্তভোগী আরও তিন নারী সম্প্রতি হালিশহরে নওশীনের বাড়িতে গিয়ে তাদের বকেয়া ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। নওশীন পাওনাদারদের বাড়িতে গিয়ে লুটপাট চালায়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নওশীন ৬টি মোবাইল নম্বরে কল করলে বেশিরভাগ ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। একটি নম্বর খুললে তিনি একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করেও সাড়া পাননি। উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিদ্দিকুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, সাধারণ ডায়েরির বিষয়ে আমি জানি না। তবে এসব ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এটি একটি সাইবার ক্রাইম। আমরা প্রতিনিয়ত এসব অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলছি এবং কাজ করছি।

About Zahid Hasan

Check Also

মারা যায়নি আবু সাঈদ, আছেন ফ্রান্সে রনির এমন মন্তব্যে নিয়ে যা জানা গেল

সম্প্রতি টিকটকে পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *