১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা আন্দো’লনের একটি মহান অধ্যায় যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এই আন্দোলনে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন হয়েছেন, অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন, অনেকে গুরুতর আহ’ত হয়ে এখনও জীবনের শেষ সময় পার করছেন। কারো রয়েছে মৃ’ত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসার ভ’য়ানক অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীন ওসমান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ভ’য়ানক অভিজ্ঞতা স্মৃতিচারন করেছেন। সেই সময় কী ঘটেছিল তার জীবনে সেটা তিনি জানালেন-
‘নৌকার সামনে পাট, পেছনে পাট, মাঝে মা, বাবা, দুই ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে ভারতে যাচ্ছিলেন ছোট শামীম ওসমান। হঠাৎ পাকিস্তানি গানবোট সামনে এসে হাজির। এরই মধ্যে বাবা ও দুই ভাই মা এবং দুই বোনের গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরলেন, সিদ্ধান্ত হলো ধরা পড়লে শ্বাসরো’ধ করে নিজেরাই নিজেদের নিথর করবেন, তার পরেও রে”প হতে দেবেন না। এরপর হুমড়ি খেয়ে পড়বেন, যা হয় হবে। এটার নামই স্বাধীনতা।’ একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধে এমন ভ’য়ং/কর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে গত শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে আবেগে আপ্লুত হয়ে এভাবেই বলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের উদ্যোগে একাত্তরে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেওয়া ৩৭ সদস্য ও তাঁর পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে মুক্ত করতে গিয়ে আমার বাবা গু’লি খেয়েছিলেন। রেডিও বাংলাদেশ, হাই কোর্ট, বাংলাদেশ টেলিভিশনেও প্রথম পতাকা উত্তোলন করেছেন তিনি। তখন তো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ছিল না। এখন তো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।
তার পরেও কবরস্থানে গিয়ে দেখেছি, মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের কী করুণ পরিস্থিতি। আমার বাবা-মায়ের কবর আমি পরিষ্কার করেছি। এখন কিছু মুক্তিযোদ্ধার কবরের ইটও নাই। ১০০-১৫০ কবরে শ্মশানের মাটি পড়েছে। কার কবর কোনটা, চেনার উপায় নেই। হয়তো মোহাম্মদ আলী ভাইও চুপ করে গিয়ে দেখে এসেছেন। হয়তো ভেবেছেন, আমার কবরেরও এই অবস্থা হবে ভবিষ্যতে! আমি কিন্তু কাউকে দোষারোপ করিনি, এখনো করছি না।’
উল্লেখ্য, শামীম ওসমান ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে পদ হারার পর তিনি ভারত ও কানাডায় স্ব-নির্বাসনে যান। প্রায় ৮ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে তিনি নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসেন। ২০১১ সালে, তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে হেরে যান। ২০১৪ সালের বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের জন্য, দলটি ওসমানকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বেছে নিয়েছিল, সেই সময় ক্ষমতাসীন কবরী সারওয়ারকে বাদ দিয়েছিল।