খতনাকালে মারা যাওয়া তাহমিদের বাবা ফখরুল আলম বুধবার বিকেলে ছেলের লাশ নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় নিঃসন্তান পিতার চোখ অশ্রুতে গলে যায়। মাঝে মাঝে জোরে চিৎকার করছিল।
অস্ত্রোপচারের আগে ছেলের সঙ্গে কথোপকথনের কথা স্মরণ করে ফখরুল বলেন, ‘হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে আমার সন্তান প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিল। বললেন- বাবা তুমি আমার পাশে থাকবে। এরপর অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলে তিনি বলেন- বাবা আমার সাহস আছে, তুমি টেনশন করো না’ অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগেই হাত নেড়ে বিদায় নিয়েছিল তাহমিদ। কে জানত– এটাই সন্তানের শেষ বিদায়!
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে খৎনা করাতে গিয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আহনাফ তাহমিন আয়হাম (১০) মারা যায়। চিকিৎসকের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ।
বুধবার মর্গের সামনে গিয়ে দেখা গেল, আত্মীয়স্বজন অনেকে তাহমিদের বাবাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এসময় ফখরুল বললেন, কাঁধে ছোট্ট সন্তানের লাশ বয়ে নিয়ে যাব– এটাও দেখা লাগল! কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলছিলেন, ‘ওই ঘরের মধ্যে তাহমিদকে রাখা হয়েছে। আমার তাহমিদ ওখানে থাকতে পারবে না। ও কখনও এসব জায়গায় থাকেনি। বের করে নিয়ে আসো। আমি ওকে বাসায় নিয়ে যাব। ওর আম্মু অপেক্ষা করছে।’
পরে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর ২টার দিকে তাহমিদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদরের আলেখা চর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে তাহমিদকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে খতনার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার পরে, তার বাবা-মাকে জানানো হয়েছিল যে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগবে। আধঘণ্টারও বেশি সময় পর অপারেশন থিয়েটারের দরজায় টোকা দিয়ে বলা হয়, আর একটু সময় লাগবে। ঘণ্টাখানেক এভাবে কেটে গেল। ফখরুল প্রবেশ করতে চাইলে তাকে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলা হয়। এরপর সন্দেহ হলে ফখরুল জোর করে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করেন। দেখেন, ছেলে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। চিকিৎসকরা বুকে হাত দিয়ে চাপাচাপি করছেন। এ সময় চিকিৎসক মোক্তাদিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি সঠিক উত্তর দেননি। অন্য হাসপাতালে পরিবারের সদস্যরা নিতে চাইলেও কর্ণপাত করেননি চিকিৎসক। এক পর্যায়ে তাহমিদের বাবাকে জোর করে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এদিকে তাহমিদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন, মোক্তাদির হোসেন ও মাহবুব হোসেন।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে— দুই বছর ধরে ওই প্রতিষ্ঠানে মাহবুব অ্যানেসথেশিয়া দিয়ে অস্ত্রোপচার করে এলেও তার কোনো নিবন্ধন নেই। অ্যানেসথেশিয়া করার জন্য একজনকে বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থেটিস্টের সদস্য হতে হবে। তবে মাহবুব ওই সংগঠনের সদস্য নন। এর বাইরে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সদস্য না হয়েও চিকিৎসা করছিলেন। মাহবুব রাজশাহীর একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা করেছেন। গ্রেফতারকৃত আরেক চিকিৎসক মোক্তাদির গাজীপুর ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন।