অভিনেতা, পরিচালক এবং মুক্তযোদ্ধা সোহেল রানা সম্প্রতি জ্বর এবং কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন অনেক নেমে যায়, শুরু হয় তীব্র শ্বাসকষ্ট, পাঠানো হয় আইসিইউতে। কিংবদন্তি অভিনেতা এক সময় ছিল তুমুল জনপ্রিয়। তবে বয়সটা বেশি হলেও মুক্তিযোদ্ধা খ্যাতিমান এই অভিনেতা এখনো অনেক মানুষেরই প্রিয়। সম্প্রতি তার ছেলে খবর দিল অভিনেতা সোহেল রানার অবস্থা আগের থেকেও আরো খারাপ।
বর্ষীয়ান অভিনেতা সোহেল রানার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। শনিবার বিকালে খবরটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার স্ত্রী জিনাত বেগম। এছাড়া তার পুত্র মাশরুর পারভেজও জানিয়েছেন বাবার সর্বশেষ অবস্থার কথা।
সোহেল রানার ছেলে মাশরুর যুক্তরাজ্যে থাকেন। বাবার অসুস্থতার খবর শুনেই ছুটে আসেন তিনি। গণমাধ্যমে এই তরুণ বলেন, ‘বাবার অবস্থা গতকালের চেয়ে আরও খারাপ। চিকিৎসকরা একটি ইনজেকশন আনার জন্য বলেছেন। অনেক জায়গায় যোগাযোগের পর সন্ধ্যা ইনজেকশনটি পেয়েছি। সবাই বাবার জন্য দোয়া করবেন।’
হাসপাতালে ভর্তির কয়েক দিন আগে থেকে জ্বর ও কাশিতে ভুগছিলেন সোহেল রানা। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করান। জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ। ২৫ ডিসেম্বর রাতে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
প্রথমে কেবিনে থাকলেও পরে শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আইসিইউতে। কারণ সোহেল রানার অক্সিজেন লেভেল কমে গিয়েছিল, কেবিনে সেই পরিমাণ অক্সিজেন দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
মাসুদ পারভেজের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায়। তিনি শিক্ষাজীবনে একজন ছাত্রনেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। তার জন্ম ঢাকায় হলেও পৈতৃক বাসস্থান বরিশাল জেলায়।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে মাসুদ পারভেজ এবং অভিনেতা হিসেবে সোহেল রানা নাম ধারণ করে।
চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন প্রযোজনা করেন তিনি। অভিনেতা ও পরিচালক হিসেবে তার যাত্রা শুরু ১৯৭৩ সালে।
বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র মাসুদ রানা সিরিজের একটি গল্প অবলম্বনে মাসুদ রানা চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সোহেল রানা। একই সিনেমার মাধ্যমে তিনি পরিচালক হিসেবে মাসুদ পারভেজ নামে কাজ শুরু করেন।
ভেঙে পড়েছেন সোহেল রানার অনুসারীরা। বয়সের সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধা এবং কিংবদন্তি এই অভিনেতার শারীরিক ক্ষমতা ও যে অনেকখানি কমে গেছে বাকি পাঁচটা মানুষের মত এটাই স্বাভাবিক। তবে চিকিৎসায় কোন ঘাটতি রাখা হচ্ছে না। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অবস্থার অবনতির কথাই জানা গেছে। প্রয়োজনীয় ইনজেকশনটি দেওয়া হয়েছে এখন দেখার বিষয় সুস্থতা কতটা দূরে তার জন্য অপেক্ষা করছে।