বাংলাদেশের এক সময়ের চর্চিত একটি নাম ছিল আরিফুল হক চৌধুরী। যিনি ছিলেন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও। বিশেষ করে মহামারী ভাইরাস শনাক্তে নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ আছে জেকেজি হেলথকেয়ারের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মহামারী ভাইরাস শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই ২৭ হাজার মানুষকে রিপোর্ট দেয়। এর বেশিরভাগই ভুয়া বলে অভিযোগ ওঠে।
আর এ অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করা হয়।
গত বছরের ১৯ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও তার স্বামী কোম্পানির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ আট আসামিকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বাবা আরিফুল চৌধুরীর অপকর্মে লজ্জিত তার সন্তানেরা। দুই সন্তানকে নিয়ে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আরিফুল চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী ফকিহা তা-সিন মোস্তফা অনন্যা। এ জন্য শিশুদের আইনগত অভিভাবক ও অভিভাবক হয়ে মামলা করেছেন অনন্যা।
গত ১৬ জানুয়ারি পঞ্চম অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক আফরোজা খাতুনের আদালতে অনন্যা এই মামলা করেন। ওই দিন অনন্যা আদালতে বলেন, তিনি দুই নাবালক সন্তানের মা। বাচ্চাদের দেখাশোনা করে। স্বামী আরিফুল চৌধুরীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আর বিয়ে করেননি তিনি। এবং তারপর থেকে শিশুরা তার সাথে থাকে। সে বলে সে তাদের অভিভাবকত্ব চায়, তাদের বাবা বেঁচে আছে। সন্তানদের দেশ ছাড়তে বাবার কোনো আপত্তি নেই।
কারাগারে থাকা আরিফুলের বক্তব্য শোনেন আদালত। আরিফুল চৌধুরী বলেন, আমি ওই দুই সন্তানের বাবা। তারা দেশের বাইরে গেলে আমার আপত্তি নেই।
গত ২৯ জানুয়ারি আদালত মাকে গার্ডিয়ানশিপ দেন। এ বিষয়ে জানতে অনন্যার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অনন্যার আইনজীবী মলয় সাহা বলেন, আরিফুল চৌধুরী জেলে আছেন। মা গার্ডিয়ানশিপ চেয়ে আবেদন করেছেন। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে আরিফুল চৌধুরীর সঙ্গে ফকিহা তা-সিন মোস্তফা অনন্যার বিয়ে হয়। তারা ২০১৪ সালে একটি কন্যা এবং ২০১৫ সালে একটি পুত্রের জন্ম দেয়। গৃহবধূ অনন্যা তার সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এরই মধ্যে আরেক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে আরিফুল। উল্লেখ্য, অনন্যা বিবৃতিতে ওই মহিলার নাম উল্লেখ করেননি। তবে জানা গেছে, ওই নারীর নাম ডাঃ সাবরিনা চৌধুরী। ২৩ অক্টোবর ২০১৫ থেকে অনন্যা ও আরিফ আলাদা থাকতে শুরু করে। পরে আরিফ সাবরিনার সঙ্গে থাকতে শুরু করে। ৩ মার্চ, ২০১৬ তারিখে, আরিফুল তার স্ত্রীকে প্রতি মাসে ৭৫,০০০ টাকা এবং তাদের সন্তানদের স্কুল যাতায়াত, ভর্তি ও জরুরি খরচ এবং মেয়ের ডিপিএসের জন্য ৫,০০০ টাকা দিচ্ছিলেন।
এদিকে বিচ্ছেদের পর আরিফুল চৌধুরীর সঙ্গে আবার সংসার করার জন্য বহুবার চেষ্টা করেন অনন্যা। কিন্তু, আরিফুল তার কথায় কর্ণপাত করেননি। ২০১৬ এবং ২০১৯ এর মধ্যে, অনন্যা বুঝতে পারে যে তাকে দুটি সন্তানকে একাই বড় করতে হবে। এমতাবস্থায় বাদী বিবাদীকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে, আরিফুল জানান, তিনি বিদেশে যেতে রাজি নন এবং সংসার করতে চান না। ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখে, অনন্যা পারস্পরিক সম্মতিতে আরিফুলকে তালাক দেয়।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আরিফুল চৌধুরী ২৩ জুলাই, ২০২০ পর্যন্ত শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় ব্যয় বহন করছিলেন। করোনা প্রতারণার মামলায় আরিফুল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে আদালত তাকে ১১ বছরের বেশি কারাদণ্ড দেন। এরপর থেকে সন্তানদের ভরণ-পোষণের খরচ বহন করছেন অনন্যা। দুই শিশু স্কুলে পড়ছে। আরিফুল চৌধুরী কারাগারে থাকার পর থেকে তার সন্তানরা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। এ কারণে বিদ্যালয় পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অনন্যা এখন তার সন্তানদের নিয়ে কানাডায় পাড়ি জমাচ্ছেন এবং নতুন জীবন গড়ার চেষ্টা করছেন। এ কারণে শিশুদের আইনি অভিভাবকত্ব পেতে হবে। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর অনন্যাকে কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস শিশুদের জন্য আইনি অভিভাবকত্বের কাগজপত্র দিতে বলেছিল। তাই শিশুটির আইনি অভিভাবকত্ব চেয়ে একটি মামলা করেন অনন্যা।
প্রসঙ্গত, এ দিকে গ্রেফতারের পর থেকেই এখনো জেলের মধ্যে রয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে এখনো চলছে সেই মামলা। আর এই মামলা থেকে সহসা তিনি অব্যাহতি পাবেন না বলেই জানা গেছে।