Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / “বানিজ্যে নিষেধাজ্ঞা হলে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসবে”

“বানিজ্যে নিষেধাজ্ঞা হলে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসবে”

দেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। রোববার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন নবাব সভাপতি এ কে আজাদ। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্যাংশন দেওয়া তাদের ব্যাপার। এটা কোন ব্যাপার না। বাণিজ্যের স্যাংশন অত্যন্ত বড় বিষয় বাংলাদেশের জন্য।মাত্র একটি পণ্য। এর ওপর নতুন বিধিনিষেধ অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসবে।

আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অনারারি ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, লন্ডনের এসওএএস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোশতাক খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ব্যাপক আলোচনার বিষয়। আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছি যে স্তরটি নিচে নেমে এসেছে তা বজায় রাখতে এবং কমতে না দিতে। কারণ এরপর আরও নিচে নামলে স্পেকুলেশন অনেক বেড়ে যাবে।

ব্যাংকিং খাতের ওপর আলোকপাত করার সময় ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে সব কিছু গভর্নরের হাতে দিয়ে দিলে হবে না। এখানে মূল কথা হলো, সামগ্রিকভাবে দেশে কী চলছে, একে সুশাসন বলা হোক বা প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে চলছে, সেগুলো বলা দরকার। এই সমস্যাগুলি ঠিক করা না গেলে পেলিয়েটিভ ট্রিটমেন্ট সাহায্য করবে না। বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর মধ্যে বাহ্যিক সমস্যাই প্রথম। বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগ, ইউক্রেনে যু/দ্ধ চলছে। শুধু বাইরের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সমস্যা সবচেয়ে বেশি। বাহ্যিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরের সমস্যা। এটা হবে। অভ্যন্তরীণ সমস্যা ভেতর থেকেই সমাধান করতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোনো উপাদান আমরা অর্জন করতে পারিনি। অর্থাৎ ডাটা নিয়ে একটা বড় সমস্যা আছে। প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। পাঁচ বছরে ৩৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ বিলিয়ন ডলারে। আমরা দেখি যে এগুলি থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তগুলি কোনও ডেটার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সে কারণে জিডিপি বাড়লেও অনুপাত হিসাব করলে দেখা যায় আমদানি, রপ্তানি, রাজস্বের অনুপাত কমছে। অর্থাৎ অর্থনীতি মারাত্মক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. মোশতাক খান বলেন, আপনি বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিচ্ছেন কিন্তু ফেরত দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। যখন এটি ঘটে তখন আপনি কিছু সময়ে ডিফল্ট হবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত ভবিষ্যতের জন্য বড় বোঝা হয়ে থাকবে।

ড. মোশতাক আরো বলেন, দেশের বর্তমান ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সিন্ডিকেট ও কিছু বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ। যে কারণে এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। অর্থনীতিতে এখন প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাই কঠোর রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা জানি আমরা পেমেন্টের ভারসাম্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি বলব এটা একটা মাঝারি সংকট। এটি একটি পূর্ণ প্রস্ফুটিত সংকটে পরিণত হয়নি। হয়তো একটু সময় লাগবে। কিন্তু এরই মধ্যে সরকার সাড়া দিচ্ছে বা কিছু নীতিগত প্রতিক্রিয়া করতে বাধ্য হয়েছে। বিনিময় হারের ক্ষেত্রে যেমন তা করতে না চাইলেও বাধ্য করা হয়। বাজার পরিস্থিতি বাধ্য করেছে। বর্তমান সংকটের জন্য ৬-৯ ঋণের সুদের হার অনেকাংশে দায়ী। আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ কারণে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে। ব্যাংকের টাকা শেষ। টাকা ফেরত আসেনি ব্যাংকে।

ড.রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থা সবার জানা। উন্নয়নের গল্প ভবিষ্যতে চলতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যেমন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। দেশে বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য আমদানি হয়। কিন্তু উন্নয়নের গল্পগুলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তাই তা সঠিক চিত্র নয়। তিনি আরও বলেন, সরকারের নীতির কারণেই আমাদের মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ঋণ পরিশোধের জন্য অর্থের প্রয়োজন হবে। তখন আরেকটি মুদ্রাস্ফীতি তৈরি হবে। হু/মকি হয়ে উঠছে জ্বালানি নিরাপত্তা।

মতবিনিময় সভার সূচনা বক্তব্যে নবাব সভাপতি এ কে আজাদ অর্থনীতির গতিশীলতা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ চান। তিনি বলেন, নোয়াবের এই আয়োজন আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বোঝার জন্য। তাদের জানতে হবে এবং বুঝতে হবে যাতে মিডিয়া অর্থনীতির সঠিক খবর উপস্থাপন করতে পারে।

নোয়াবের সদস্যদের মধ্যে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, বণিক বার্তা প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। এসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রায় ২৫ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

About Babu

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *