বাংলাদেশে গত দুই মাসে একাধিক দূর্ঘটনা ঘটেছে। তবে একেরপর এক অগ্নিকান্ড কেন হচ্ছে ? কারা এর পেছনে দায়ি? আসলে কি তাহলে নাশকাত চলছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক স্পর্শকাতর এই প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। সোমবার বিকেলে ব্যাংকের চতুর্থ তলায় (উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত) মেডিকেল সেন্টারের কেন্দ্রীয় স্টোররুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
মেডিকেল সেন্টারে চারটি রেফ্রিজারেটর এবং বিপুল পরিমাণ ওষুধ ছিল। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
গত ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি বিএম কনটেইনারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এটি 15 থেকে 20টি পাত্রে বিস্ফোরিত হয়। এ সময় প্রতিটি কন্টেইনার শক্তিশালী বোমায় পরিণত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।
ঘটনার সাত দিন পর ১১ জুন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ঢাকা-সিলেট আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের পাওয়ার কার বগিতে আগুন লাগে। ২ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগের দিন রাজধানীর প্রগতি সরণিতে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
এছাড়া ১১ জুন ভোর সোয়া ৫টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট থেকে যাত্রী ও যানবাহনবাহী একটি ফেরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রোকেয়া নামের ফেরিটি শরীয়তপুরের মাঝিকন্দি ঘাটের দিকে যাচ্ছিল।
এর আগে গত ৫ জুন পাবনায় কুলিন ইন্ডাস্ট্রি নামে একটি পাট কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর একদিন পর ৮ জুন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় একটি জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
পরদিন (৬ জুন) সকালে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার মালুম মসজিদ এলাকায় জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। গত ৯ জুন রাজধানীর পোস্তগোলায় একটি চিপস কারখানায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট।
এসব অগ্নিকাণ্ডের সবগুলোই হয় কারখানায় বা যানবাহনে। বাস থেকে শুরু করে ট্রেন, ফেরিও বাদ যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে, একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কি শুধুই অবহেলা, নাকি নাশকতার কোনো যোগসূত্র?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তুচ্ছতার কোনো অবকাশ নেই। তারা নাশকতার সন্দেহ প্রকাশ করছে। এগুলো দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দক্ষতা দেখাতে হবে। নাশকতার কোনো চিহ্ন থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। আর পুলিশ বলছে, তারা এ ধরনের ঘটনার ওপর কড়া নজর রাখছে। গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছেন। অপরাধী কেউ রেহাই পাবে না।
সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় নাশকতার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৫ জুন এসএসএফ-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনার তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যাতে না হয় সেজন্য আমরা নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের বিরোধিতাকারীরা এ ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। আমি জানি না তারা কি করবে। তবে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ইনস্টলেশন নিরীক্ষণ করা প্রয়োজন. ”
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। আর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। অগ্নিনির্বাপণে কোনো ঘাটতি পূরণ করা উচিত। সবার চোখ-কান খোলা রাখা উচিত। ‘
সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া) বলেন, সাম্প্রতিক সব ঘটনায় পুলিশের নজরদারি ও গোয়েন্দা নজরদারি সার্বক্ষণিক রয়েছে। কামরুজ্জামান। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, এসব ঘটনার তদন্তে অন্য কোনো বিষয় সামনে এলে বা এর সঙ্গে দুষ্ট চক্রের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বা ২৫ জুন (পদ্মা সেতু উদ্বোধন) বড় অনুষ্ঠান নিয়ে যাতে কোনো চক্রান্তকারী কিছু করতে না পারে সেজন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। ‘
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক মনে করেন, একের পর এক আগুন দুর্ঘটনা নয়। এসব ঘটনায় নাশকতা রয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত। এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে।
বিচারপতি শামসুদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমরা জানি পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনেকেই পছন্দ করেন না। তারা না খোলার চেষ্টা করছে। সীতাকুণ্ডের ঘটনা ষড়যন্ত্রের ফল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি কোনো বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়, এটি একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে এটা সবাই জানে। বিরোধীরা এটা সহ্য করতে পারে না। ‘
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক পরিচালক মেজর (অব.) একেএম শাকিল নেওয়াজ এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দেশে তিন ধরনের অগ্নিকাণ্ড হয় প্রাকৃতিক বা বজ্রপাত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪র্থ তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া অফিসার আনোয়ারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মতিঝিল টহল ইউনিট আগুন দেখতে পেয়ে ফায়ার কন্ট্রোল রুমে খবর দিলে তাৎক্ষণিক কাজ শুরু করে। এরপর সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশন থেকে আরও ৩টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। বর্তমানে ৪টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে।