সমগ্র বিশ্বের মোড়ল খ্যাত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান সময়ে দেশটির সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন জো বাইডেন। সম্প্রতি তিনি বিশ্বের গন্তান্ত্রিক দেশ গুলোএ নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। তবে এই সম্মেলনে বিশ্বের অনেক গনতান্ত্রিক দেশই আমন্ত্রন পায়নি। এরই মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের এই আমন্ট্রন না পাওয়া নিয়ে চলছে ভেশ আলোচনা-সমালোচনার। এরই ভিত্তিতে এই নিয়ে প্রতিক্রীয়া ব্যক্ত করলেন বেশ কিছু বিশ্লেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় ভার্চ্যুয়াল গণতন্ত্র সম্মেলনে ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যেখানে আমন্ত্রণ পায়নি বাংলাদেশ। মূলত বাংলাদেশকে কূটনৈতিক চাপে রাখতেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক আমন্ত্রণ না পাওয়ার একটি বড় কারণ। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যেহেতু চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক এটাও একটা কারণ হতে পারে। আমন্ত্রণ না পাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদও হতে পারে। যেখানে আমেরিকার নিজেদের গণতন্ত্রই নড়বড়ে সেখানে তারা অন্যের গণতন্ত্র নিয়ে কি আলোচনা করবে। আলাপকালে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, আমার মনে হয়ে চীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশকে একাত্ম করতেই সম্মেলন ডেকেছেন বাইডেন। বাংলাদেশ এখানে অংশগ্রহণ না করটাই ভালো। কারণ বাংলাদেশ এখানে অংশ নিয়ে কি-ই বা বলবে। যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানালো না সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। যেখানে ভারত, পাকিস্তান ও ইরাকের মতো দেশ আমন্ত্রণ পেয়েছে। বুঝলাম না কিসের মানদণ্ডে গণতন্ত্র যাচাই করা হয়েছে। হয়তো বাংলাদেশ ছোট দেশ দেখে যুক্তরাষ্ট্র ডাকেনি। আমি মনে করি এ ধরনের গণতন্ত্র সম্মেলন ডাকার আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের গণতন্ত্রকে ঠিক করা দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ড. অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে গণতন্ত্র সম্মেলন করতে যাচ্ছে আসলে এটি একটি চীনবিরোধী সম্মেলন। এ ধরনের সম্মেলন করে তারা আলোচিত হওয়ার চেয়ে সমালোচিতই হবে বেশি। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের একটা উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশকে কূটনৈতিক চাপে ফেলতেই যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি। এটা তাদের একটি কূটনৈতিক কৌশল। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এই সম্মেলনে এমন বহু দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে যারা গণতন্ত্রের দিক দিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। এ থেকেই বোঝা যায় এ সম্মেলনে গণতন্ত্র মুখ্য নয়। চীনের বিরুদ্ধে এই দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন করাই যুক্তরাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশ নেয়া বা না নেয়ায় কিছু এসে যায় না। এমন যে নয় এটি বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্ববহ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন করে আসছে। অতীতেও তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে বহুবার প্রশ্ন করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের গণতন্ত্রই আজ হুমকির মুখে। ওদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বিবিসিকে বলেন, এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নই আমরা। তাছাড়া এবারই প্রথম এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর প্রথম ধাপে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সম্মেলনের পরবর্তী ধাপে বাংলাদেশ আমন্ত্রিত হতে পারে। এ বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হওয়া জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আহ্বানে আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনে মাত্র ৪০টির মতো দেশ আমন্ত্রিত ছিল, যার মধ্যে বাংলাদেশও ছিল। সেখানে তো অনেক দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
গত কয়েকদিন ধরেই এই আমন্ত্রন না পাওয়া নিয়ে নানা আলোচনা- সমালোচনা বিরাজ করছে। অবশ্যে এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে প্রথমভারের মত দেশটি এমন সম্মেলনের আয়োজন করেছে। তবে দ্বিতীয় ধাপে বাংলাদেশ আমন্ত্রন পেতে পারে। তবে বাংলাদেশের আমন্ত্রন না পাওয়া দেশের সুশীল সমাজের অনেকেই এবং বিরোধী দল গুলো ভিন্ন ভাবে দেখছেন।