মিয়ানমার থেকে পরাপর কয়েকবার বাংলাদেশ সীমান্তে গোলা বর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় হতাহতও হয়েছে বলে জানা গেছে। এরকম অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়। মিয়ানমার প্রত্যেকবার এমনটা আর হবেনা বলে আশ্বাস দিলেও তারা তাদের কথা রাখছেন না। একই ঘটনা ঘটছে বারবার। সম্প্রতি জানা গিয়েছে সীমান্তে গোলাবর্ষণের জন্য আরাকান আর্মি ও আরসাকে দায়ী করছে মিয়ানমার।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বিদ্যমান ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ নষ্ট করতে সীমান্ত হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে মিয়ানমার। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত ও আশপাশের এলাকায় হামলার জন্য দেশটি আরাকান আর্মি ও আরসাকে দায়ী করে।
সোমবার সকালে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনায় নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেনিং বিভাগের মহাপরিচালক এ কথা বলেন। সোমবার রাতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম পেজে বৈঠকের তথ্য প্রকাশ করে।
এ সময় মিয়ানমার বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করতে সীমান্ত এলাকায় চলমান পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এই দুই পক্ষ।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে সীমান্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার সময়, জে ফিউ উইন বলেন যে আরাকান আর্মি, আরসা সহ, ১৬ সেপ্টেম্বর টংপিউ (বাম) বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) নং ৩১ সীমান্ত চৌকিতে মর্টার শেল নিক্ষেপ করে আক্রমণ করে। ওই হামলার সময় তিনটি মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়ে। এছাড়াও, আরাকান আর্মি এবং আরসা ১৬ এবং ১৭ সেপ্টেম্বর টংপিউ (ডানে) বিজিপির ৩৪ নং সীমান্ত ফাঁড়িতে পৃথক মর্টার হামলা চালায়। এ সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৯ টি মর্টার শেল পড়ে।
বৈঠকে জা ফিউ উইন দুটি ঘটনার উল্লেখ করে দাবি করেন যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বিদ্যমান ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ নষ্ট করতে আরাকান আর্মি ও আরসা হামলা চালিয়েছে।
বৈঠকে জাও ফিউ উইন আরও বলেন, সীমান্তের কাছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার সময় মিয়ানমার সবসময়ই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশসহ সব দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সীমান্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে মিয়ানমার পক্ষ বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়ে তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পূর্ণ ও পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি ও আরসার পরিখা ও ঘাঁটি রয়েছে বলে গত ৭ সেপ্টেম্বর কূটনৈতিক মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে মিয়ানমার জানায়। সোমবারের বৈঠকে জে ফিউ উইন সেই প্রসঙ্গটি আবার উত্থাপন করেন। তিনি ঘাঁটিগুলো তদন্ত করে সেগুলো ভেঙে ফেলার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। পরে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি অনানুষ্ঠানিক চিঠি হস্তান্তর করেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা যুদ্ধ চায়না। বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। মিয়ানমায়ের এমন কর্মকান্ড খুবই চিন্তার একটি বিষয়। বারবার এমন ঘটনা কখনো ভালো কিছুর সংকেত ডেয় না বলে ধরনা করা হচ্ছে। তবে এমন ঘটনা আবারো ঘটলে জাতিসংঘকে বিষয়টি জানানো হবে বলে জানা গিয়েছে।