Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / International / বাংলাদেশ-ভিয়েতনামকে টেক্কা দিতে নয়া কৌশলে ভারত, প্রতিবেদনে উঠে এলো বিস্তারিত

বাংলাদেশ-ভিয়েতনামকে টেক্কা দিতে নয়া কৌশলে ভারত, প্রতিবেদনে উঠে এলো বিস্তারিত

এশিয়ার মহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে প্রতি বছর ইউরোপ সহ অন্যন্য অনেক দেশে বিভিন্ন ধরনের পন্য রপ্তানি হয়ে থাকে। বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশের তৈরি পোশাকের ব্যপক চাহিদা রয়েছে ইউরোপের দেশ গুলোতে। তবে বর্তমান সময়ে পোশাক রপ্তানিখাতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম। এবার এই দুটি দেশকে টেক্কা দিতে নয় কৌশল অবলম্বন করেছে ভারত। এমনকি এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস।

ভারতে টেক্সটাইল শিল্পের ইতিহাস বেশ পুরোনো। দেশটির অর্থনীতিতে এর গুরুত্বও অপরিসীম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ভারতের টেক্সটাইল ব্যবসা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালে দেশটির টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি কমেছে অন্তত তিন শতাংশ এবং ২০২০ সালে এর হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের মতো সাশ্রয়ী দেশগুলো ব্যবসা করেছে আশাতীত। ভারতের টেক্সটাইল শিল্পে এমন বিপর্যয়ের কারণ এবং এই সংকট থেকে উত্তরণে, অর্থাৎ বাংলাদেশ-ভিয়েতনামকে টেক্কা দিতে দেশটি কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা নিয়ে বিশদ প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস। সোমবারের (১০ জানুয়ারি) ওই প্রতিবেদনে প্রতিযোগিতায় ভারত পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বেশ কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাড়তি খরচ ভারতের টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বড় সমস্যা। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত খরচ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি। প্রধান আমদানিকারকদের সঙ্গে ভারতের মুক্ত অথবা অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তির অভাব রয়েছে। পোশাকের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং কাপড়ের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে এ ধরনের কোনো চুক্তি না থাকা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ওপর বাড়তি দামের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।

ভারতে উচ্চ মূলধন ব্যয় এবং প্রায় সব টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির আমদানিনির্ভরতা সন্তোষকজনক মুনাফা অর্জনকে কঠিন করে তুলেছে। চীনা প্রস্তুতকারককের তুলনায় উৎপাদনে বাড়তি সময় নেওয়া ভারতকে প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে দিচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনামূলক নিকটবর্তী উৎপাদনকেন্দ্রে বিনিয়োগের প্রবণতাও ভারতীয় টেক্সটাইল শিল্পের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে চলমান মহামারিতে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত ভারতের জন্য কিছুটা উপকারই করেছে। ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ নীতি, অর্থাৎ শুধু চীননির্ভর সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা ভারতীয়দের সামনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে ভারতের যৌগিক বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার (সিএজিআর) আট থেকে নয় শতাংশ হওয়া উচিত। সেটি হলে ২০২৬ সাল নাগাদ দেশটির টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি সাড়ে ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে। ভারতের টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য আরও বড়। তারা আগামী পাঁচ বছরে দেশটির টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি ১০ হাজার কোটি ডলারে নিতে চায়। এসব লক্ষ্য পূরণ হলে ভারতে শুধু টেক্সটাইল শিল্পেই নতুন করে ৭৫ লাখ থেকে এক কোটি চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। সেখানে এ শিল্পে বর্তমানে সাড়ে চার কোটি মানুষ সরাসরি জড়িত। অর্থাৎ, টেক্সটাইল শিল্পে রপ্তানি বৃদ্ধি এবং নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি ভারতীয় অর্থনীতির জন্য বড় অর্জন হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই লক্ষ্য অর্জনে, অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়কে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সাড়ে ছয় হাজার কোটিতে নিয়ে যেতে ভারতকে পাঁচটি খাতে দ্বিগুণ লাভ করতে হবে। সেগুলো হলো-

পোশাক: ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ আবেগ কাজে লাগিয়ে এই খাতে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার আয় বাড়াতে হবে।

কাপড়: আঞ্চলিক ‘ফ্যাব্রিক হাব’ হিসেবে অবস্থান তৈরি করে ভারতকে এই খাতে ৪০০ কোটি ডলার আয় বাড়াতে হবে। আর এই কার্যক্রম শুরু হতে পারে কটন ওভেন থেকে।

হোম টেক্সটাইল: বিশ্বব্যাপী গ্রাহক বেস প্রসারিত করে এই খাতে ৪০০ কোটি ডলার আয় বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
মনুষ্য-তৈরি ফাইবার ও সুতা: এমএমএফ বা মনুষ্য-তৈরি ফাইবার পণ্যগুলোতে নজর দিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি ডলার আয় বাড়াতে হবে।

কারিগরি টেক্সটাইল: সম্ভাব্য অভ্যন্তরীণ চাহিদার ভিত্তিতে সক্ষমতা তৈরি করে ২০০ কোটি ডলার আয় বাড়াতে হবে।

এসব লক্ষ্য অর্জনে ভারতে সরকারের পাশাপাশি শিল্প সংশ্লিষ্টদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। ইকোনমিক টাইমসের খবর অনুসারে, ভারত সরকার এরই মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সাম্প্রতিক এমআইটিআরএ, পিএলআই, আরওডিটিইপি কর্মসূচিগুলো দেশটির টেক্সটাইল শিল্পকে নতুন করে আশা দেখাচ্ছে। তবে পুরোনো রাজত্ব ফিরে পেতে তাদের আরও বেশি কিছু দরকার। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণে ভারতের নতুন করে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ লাগবে। আর এই বিনিয়োগ পেতে হলে তা থেকে আশানুরূপ মুনাফা পাওয়ারও নিশ্চয়তা দিতে হবে। পিএলআই (প্রোডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ) এবং এমআইটিআরএ (মেগা ইনভেস্টমেন্ট টেক্সটাইল পার্কস) কর্মসূচি এতে সাহায্য করতে পারে। তবে মূলধন ব্যয় কমাতে ভারতকে অবশ্যই যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক কমানো অথবা স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের দিকেও নজর দিতে হবে। অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে থাকবে প্রধান আমদানিকারকদের সঙ্গে মুক্ত অথবা অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি করা, সেবা খাতগুলোর সংস্কার, ডিজিটাইজেশন, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্থায়ী বিনিয়োগ। টেক্সটাইল শিল্পে আগামী পাঁচ বছরে ভারতের পারফরম্যান্সই পরবর্তী বহু বছরের গতি নির্ধারণ করে দিতে পারে।

বর্তমান সময়ে পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম শীর্ষ স্থানে রয়েছে এবং বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এই খাত থেকে উপার্জিত অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশ সরকারও এই খাতের আয় আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। এমনকি এই খাতের উন্নয়নের জন্য প্রদান করছেন নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা।

About

Check Also

হাসিনার ট্রাভেল ডকুমেন্টে কী লিখেছে ভারত

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি টানা চারবার ক্ষমতায় ছিলেন, বর্তমানে ভারতীয় মাটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *