বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সর্বোচ্চ অর্থ নিয়ন্ত্রককরি ব্যাংক। আর এই কারণেই তারা দেশের ব্যাংকিং খাতে নানা ধরনের নিয়মকানুন জারি করে থাকে। যার ধারাবাহিকতায় এবার নতুন একটি আইন জারি করলো ব্যাংকটি।দেশের ব্যাংকিং অনিয়মের কোনো খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেই অনুমানের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক থেকে পরিচালক পদমর্যাদার ১০ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান। আর এতে স্বাক্ষর করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। এ ছাড়া নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে তাদের চেম্বারে ডেকে নিয়ে একটি ঘটনা ঘটেছে।
কাজী ছাইদুর রহমান গণমাধ্যমে ব্যাংকিং-সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ নিয়ে নির্বিচারে জল্পনা-কল্পনার ভিত্তিতে অন্তত তিন বিভাগীয় কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের ব্যাংকের অনিয়মের তথ্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু কোনো সংবাদেই বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য বা উৎস উল্লেখ করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচলিত অফিস বিধি অনুসারে, সহকারী পরিচালক বা উপ-পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা যে কোনো বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি ফাইল (সরকারি দায়িত্ব পালনের প্রক্রিয়ার নাম) শুরু করেন। প্রয়োজনে অতিরিক্ত পরিচালক বা পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা করার সুযোগ রয়েছে। তবে এটি খুব একটা জনপ্রিয় নয়। কিন্তু ডেপুটি গভর্নর নিজেই কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন।
এসব কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশের কারণে সাংবাদিকরা কীভাবে অধিদপ্তরের তথ্য জানতে পারলেন।
সম্প্রতি ডলার সংকট, ডলারের অস্বাভাবিক মুনাফার সঙ্গে জড়িত ব্যাংকের নাম, এসব ঘটনায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের অপসারণের খবর, ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের শো-কজ নোটিশ, ডলার। ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে চোরাচালান, ঋণ কেলেঙ্কারি, আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশই নয়, মৌখিকভাবে তিরস্কারও করেছেন কয়েকটি দপ্তরের কর্মকর্তাকে। কাজী ছাইদুর রহমান এমনকি সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ করার কথাও বলেছেন।
বিভিন্ন ইস্যুতে সংবাদ প্রকাশের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কঠোর-সাময়িক নিষেধাজ্ঞা এর আগেও ঘটেছে। এমনকি গত জুলাইয়ে আবদুর রউফ তালুকদা যেদিন নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, সেদিনও গভর্নর হাউসে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে বিক্ষোভের মুখে ওইদিন বিকেলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, যেসব কর্মকর্তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তারা জবাব দিলেই সমাধান করা হবে। তবে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ব্যাংকিং সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই তথ্যটি বাংলাদেশ ব্যাংকের- এটা বলা যাবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে আরও সীমিত করবে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুশাসন ও জবাবদিহিতার পরিপন্থী।
জানা গেছে, কাজী ছাইদুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বে থাকায় তার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। এমনকি তার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের হয়রানি করার খবরও পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া তার বিভাগ না হলেও অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করার নজির রয়েছে তার। এ ছাড়া মতিঝিল শাখা থেকে একটি বিভাগ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে প্রধান কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। শাখা পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান কার্যালয়ের কাছে যেতে হবে। তবে ঢাকার বাইরের শাখাগুলো স্বাভাবিকভাবে এসব অধিকার পূরণ করতে সক্ষম।
এ দিকে এই আইন নিয়ে এখন বেশ বিপাকে পড়েছে ব্যাংকের সব কর্মকর্তারা। তারা সকলেই এমন আইন নিয়ে বলতে পারছেন না কিছুই। এ বিষয়ের সত্যতা জানতে কাজী ছাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।