Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বাংলাদেশ নিয়ে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এত বেশি আগ্রহের কারণ

বাংলাদেশ নিয়ে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এত বেশি আগ্রহের কারণ

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ও বক্তব্য নতুন মেরুকরণের আভাস দিচ্ছে। আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বর্তমান সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দৃশ্যমান হলেও চীন ও রাশিয়ার অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের বিরোধ এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও দৃশ্যমান। এর প্রভাব বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও পড়ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্বের নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণে বাংলাদেশ বৃহৎ শক্তির স্বার্থের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে নানা মত রয়েছে।

কিছু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক মনে করেন, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, সম্ভাব্য অর্থনীতি এবং বঙ্গোপসাগরে বৈশ্বিক স্বার্থ রাজনৈতিক মেরুকরণের নতুন ক্ষেত্র। এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
বিশ্লেষকদের আরেক অংশ মনে করেন, ক্ষমতাধর দেশগুলোর বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহ থাকলেও তা খুব বেশি নয়।

আমেরিকা কি চায়?

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মনে করেন, বাংলাদেশ আসলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার নতুন ‘মেরুকরণের ক্ষেত্র’ হয়ে উঠেছে।

তার বিশ্লেষণ হলো, বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির অংশ হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার’ জন্য কাজ করা। এরই অংশ হিসেবে তারা বাংলাদেশে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

দ্বিতীয় কারণ হল আমেরিকার একটি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল রয়েছে যা তারা সক্রিয়ভাবে অনুসরণ করছে। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া অঞ্চলে বন্ধু সংগ্রহে আগ্রহী।

তিনি বলেন, আমেরিকার লক্ষ্য চীন-রাশিয়া সার্কেল থেকে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক বিশ্বের বৃত্তের সঙ্গে যুক্ত করা বা সংযোগ জোরদার করা।

কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হোক। একই সঙ্গে এসব দেশে বাংলাদেশকে যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে বাণিজ্য সুবিধার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী রাখা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে কোভিড এবং ইউক্রেন যুদ্ধের পরে এই অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই দেশগুলির মধ্যে বিশেষ করে চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে আদর্শগত মিল বাড়ছে। আমেরিকা বা পশ্চিমাদের সাথে তাদের আদর্শগত মিল না থাকায় তারাও এই অঞ্চলে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী।

তিনি বিশ্বাস করেন যে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা এখানে মূল বিষয়।

হুমায়ুন কবির বলেন, রাশিয়া-চীন আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো খুব সংগঠিতভাবে পরিচালনা না করার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে এবং সে কারণেই বাংলাদেশের চারপাশে এই তিন-চারটি কেন্দ্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি হচ্ছে।

এদিকে চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণে চীন ব্যাপকভাবে কাজ করছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক মূলত অর্থনৈতিক।

রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেকটা একই রকম। বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ খাতে রাশিয়ার বড় বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গেও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাশিয়া বাংলাদেশের পাশে ছিল। এছাড়া বাংলাদেশ এ দেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাব এনাম খান মনে করেন, বাংলাদেশ তার ভূ-কৌশলগত অবস্থানের কারণে স্বাভাবিকভাবেই সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তিনি মনে করেন, গত কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেশ এগিয়েছে। কো”ভিড-পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বেশ স্থিতিশীল ছিল, যা এটিকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।

ড. সাহাব এনাম খান বলেন, বাংলাদেশ একদিকে চীন থেকে প্রচুর আমদানি করে, অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলোতেও রপ্তানি করে। ফলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা করে আসছে।

কানাডা ভিত্তিক অনলাইন প্রকাশনা ‘ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট’ অনুসারে, বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন টিকিয়ে রাখতে পারলে মধ্যম শক্তির দেশে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় বাজার। যার কারণে পরাশক্তি দেশগুলো এতে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়িয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের অংশ যা ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করেছে। ফলে এটি ‘স্ট্র্যাটেজিক লাইন অব কমিউনিকেশন’ বা ‘সাপ্লাই লাইন অব কমিউনিকেশন’ হয়ে গেছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষক। এ কারণে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব অনেক।

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মার্শাল আর্ট বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, চীন, রাশিয়া ও আমেরিকার বিরোধে বাংলাদেশ একটি ‘সেকেন্ডারি বা উপলক্ষ’ মাত্র।
তার মতে, বাংলাদেশের মেরুকরণের ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আর ঘনিষ্ঠতর হওয়া এবং এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আমেরিকার অবস্থান।

মাহমুদ আলী বলেন, নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্নায়ুযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে অভিন্ন বা একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। তাদের আধিপত্য পরবর্তী ২৫ বছর অব্যাহত ছিল।

দ্বিতীয় পর্যায়ের শক্তিশালী দেশগুলো হলো ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, এরা সবাই তখন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। বিরোধিতা করার মতো কেউ না থাকায় আমেরিকা প্রায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল।

তার বিশ্লেষণ হল যে ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল করা এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সামরিক গঠনের মতো ঘটনার পর এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখতে পারবে না। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন-রাশিয়ার মধ্যে এক ধরনের বৈরিতা দেখা দেয়।

সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, যেহেতু এই তিন রাষ্ট্রের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলছে, তাই বলা যায় বাংলাদেশ একটি সংগ্রামের গৌণ বা পরোক্ষ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *