বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে রাজনৈতিক দল ছাড়াও বিশ্বের অনেক প্রভাশালী দেশ ও সংগঠন সোচ্চার রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ আলোচিত।
শনিবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘সংলাপও হোক, ভোট হোক’ শিরোনামে একটি টকশোর আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন বিশিষ্ট কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি। একসময় আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত এই সাবেক সংসদ সদস্য সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
টকশোর একপর্যায়ে উপস্থাপকের পক্ষ থেকে রনির নিকট জানতে চাওয়া, আপনি বলেছেন ডোনাল্ড লুর চিঠি বিএনপির বিজয়, আ.লীগের জন্য চরম অস্বস্তি, এটি কীভাবে?
জবাবে রনি বলেন, ডোনাল্ড লুর চিঠিতে এটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের আর সময় ছিল না। তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে আওয়ামী লীগসহ তিন দলকে সংলাপের জন্য চিঠি দেন ডোনাল্ড লু।
একটি জিনিস মনে রাখবেন যে ডোনাল্ড লু এশিয়া সাবকন্টেটে অত্যন্ত প্রভাবশালী। তার চিঠি আগামীতে বাংলাদেশকে কতটা আঘাত করবে তা বিবেচ্য নয়। মূল কথা হলো, পাকিস্তানের ইমরান খানের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডোনাল্ড লুকে নিয়ে ব্যাপক চর্চা হচ্ছে।
আমরা কিন্তু মোটামুটিভাবে লু সম্পর্কে জানি। বিশেষ করে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে বা পালাপরিবর্তনে যে ধরনের কলকাঠি নাড়তে হয় অথবা যা ম্যাকানিজম করতে ডোনাল্ড লুর সেই দক্ষতা আছে। শুধু তাই নয়, সেটি কিন্তু প্রমাণিত। এমনকি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন।
যদিও পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, তবুও মনে রাখতে হবে ইমরান খান ইউরোপে বেশ প্রভাবশালী ছিলেন। চোখের পলকে তার মতো মানুষ পদচ্যুত হলেন। যিনি পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন এবং রাজা নামে অভিহিত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ইমরান খান নিজেই বলেছেন, ডোনাল্ড লু-এর কারণে তাকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে। সেই ডোনাল্ড লুই যখন বাংলাদেশে এসেছেন এবং তার চিঠি যখন দেশে এসেছে; সঙ্গত কারণে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। সেই ভয়ের একটা অংশ হল ডোনাল্ড লু একেবারে শেষের দিকে লিখেছেন। তিনি চাইলে এক মাস আগে বা ১৫ দিন আগেও চিঠি দিতে পারতেন। তখন আওয়ামী লীগ বিকল্প ভাবতে পারে। কিন্তু ডোনাল্ড আওয়ামী লীগকে সেই সুযোগ দেননি।
চিঠি পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদের যা বলেছেন তাতে প্রমাণিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রকাশ্যেই দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।
এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি প্রতিপক্ষ নয়, মোটেও নয়। এখন সবার আগে দলের বিদ্রোহী দলগুলোর সঙ্গে লড়াই করে আওয়ামী লীগকে টিকে থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবশ্যই একে অপরের সাথে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং মুখোমুখি হয়ে টিকে থাকতে হবে।
সত্যি কথা বলতে কী, ডোনাল্ড লু-এর চিঠি আওয়ামী লীগকে বিপাকে ফেলেছে। নিরাপদে বেরিয়ে গেছে বিএনপি।