বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার একটি অংশ তথ্য সন্ত্রাস এবং প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, যা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে হিন্দু নির্যাতনের মিথ্যা কাহিনী প্রচার করে এই মিডিয়া বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অস্থিতিশীল দেখানোর চেষ্টা করছে। এর পেছনে কেবল সংবাদ প্রচার নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের আলামত স্পষ্ট।
বাংলাদেশি হিন্দুদের উপর নির্যাতনের মিথ্যা গল্প ছড়ানোর অভিযোগে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জড়িত। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের কলকাতায় প্রবেশ করা কিছু বাংলাদেশি হিন্দুর কাছ থেকে জোরপূর্বক মিথ্যা সাক্ষাৎকার নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনই এক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যের বক্তব্য অনুসারে, পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিকরা তাদের শিখিয়ে দেওয়া তথ্য প্রকাশ্যে বলতে বাধ্য করেছে। এ ধরনের কৌশলে তৈরি করা হয় হিন্দু নির্যাতনের ভিত্তিহীন গল্প, যা পরে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়।
সম্প্রতি ভারতের এবিপি আনন্দ চ্যানেলে শুভ কর্মকার নামের এক বাংলাদেশি যুবকের সাক্ষাৎকার ব্যাপক আলোচিত হয়। ফরিদপুরের স্বর্ণকার পট্টির ব্যবসায়ী সুনীল কর্মকারের ছেলে শুভ দাবি করেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ব্যাপক নির্যাতন চলছে। তিনি বলেন, “মন্দির ভাঙা, বাড়িঘর দখল, এবং নারীদের উপর নির্যাতন” নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু এই বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার নিজের পরিবার।
শুভর বাবা-মা সরাসরি তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে তারা কখনো কোনো নির্যাতনের শিকার হননি। শুভর মা সুনীল কর্মকার বলেন, “আমরা এখানে খুবই নিরাপদে আছি। আমার ছেলেকে ভুল তথ্য দিয়ে এই কথা বলানো হয়েছে।” শুভর বাবা জানান, সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার পর পাসপোর্ট আটকে রেখে সাংবাদিকরা শুভকে জোরপূর্বক সাক্ষাৎকার দিতে বাধ্য করে।
আরেকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে দ্য ওয়াল চ্যানেলের একটি সাক্ষাৎকারে। সেখানে অমীয় সরকার নামের এক ব্যক্তি নিজেকে বাংলাদেশ থেকে নির্যাতনের শিকার বলে দাবি করেন। অথচ তথ্য বেরিয়ে এসেছে যে তিনি ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন এবং দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তার অতীত ঘাটলে জানা যায়, তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন এবং বাংলাদেশে বেশ কিছু মামলার আসামি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিভাজন তৈরি এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ার কিছু অংশ এই ধরনের মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে।
এ ঘটনাগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ দেখা যায়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্থানীয় সাংবাদিক এবং প্রশাসন বিষয়টির সঠিক সত্যতা তুলে ধরতে সচেষ্ট। বিশেষ করে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সরাসরি প্রতিবাদ ও মিথ্যা গল্প খণ্ডন ভারতীয় ষড়যন্ত্রের মুখোশ খুলে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে এমন মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ না হলে এই সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দুই দেশের জনগণ এবং সরকারের উচিত এই ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে একযোগে কাজ করা।
ভারতীয় মিডিয়ার এই ধরনের কার্যকলাপ থেকে বোঝা যায় যে, শুধুমাত্র সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব। তথ্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটনে একসঙ্গে কাজ করা জরুরি।