সম্প্রতি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আবারো নতুন করে বার্তা প্রদান করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। আর সেখানে বরাবরের মত উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশী সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। পাঠকদের উদ্দেশ্যে এ নিয়ে দেয়ার তার লেখনী এবং একটি ভিডিও তুলে ধরা হলো হুবহু:-
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে-রাশিয়ান এমন অভিযোগ আমলে নিতে চায়না যুক্তরাষ্ট্র। এসবকে রাশিয়ান প্রোপাগান্ডায় হিসাবেই দেখছে দেশটি।
মঙ্গলবার স্টেট ডিপার্টমেন্টে অনুষ্ঠিত নতুন বছরের প্রথম ব্রিফিংএ এমন অভিমত ব্যক্ত করেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস। পাশাপাশি বাংলাদেশে বিরোধি নেতা-কর্মীদের প্রতি গ্রেফতার ও হয়রানী বন্ধেরও আহ্বান জানান নেড প্রাইস। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের অবস্থানকে সমর্থন করে মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে যে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, বিরোধি নেতাকর্মীদের হয়রানী করা হয়েছে, তা অবশ্যই উদ্বেগের। বাংলাদেশের জনগণের মতপ্রকাশ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মৌলিক স্বাধীনতাকে সম্মান করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। আমি, স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা এবং আমাদের রাষ্ট্রদূত সেই বিষয় গুলো তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান এক ও অভিন্ন।
ব্রিফিংএ অংশ নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেট মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান- আপনি জানেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যখন বিরোধী কর্মী সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়িতে বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বাংলাদেশের সমর্থক দ্বারা হয়রানির শিকার হন। রাশিয়া বিশ্বাস করে যে এই ঘটনাটি আমেরিকান কূটনীতিকের কার্যকলাপের একটি প্রত্যাশিত ফলাফল, এবং ছুটির দিনে, মস্কো থেকে রাশিয়ান এক মুখপাত্র এটিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। প্রকারান্তরে কী এটি রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নয়? আর এই পরিকল্পিত এই ঘটনার জন্য বাংলাদেশ সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? আমরা শুনেছি, ক্ষমতাসীন একজন মন্ত্রীর এক ব্যক্তিগত স্টাফ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে এই তথাকথিত বিক্ষোভের আয়োজনের পেছনে ছিলেন।
জবাবে নেড প্রাইস বলেন, “দেখুন, আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে এই বিষয়ে যা শুনেছি তা আমি বিবেচনা করতে যাচ্ছি না। আপনি জানেন, আমরা প্রায়শই প্রোপাগান্ডায় আমল দেইনা । আমাদের পক্ষ থেকে যা বলতে পারি তা হল, আমরা নিয়মিতভাবে সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করি। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক উপস্থিতির আওতায় রাজনৈতিকসহ সকলের সঙ্গে বহুমাত্রিক আলাপ-আলোচনায় আমরা নিয়োজিত। সমগ্র বিশ্বজুড়ে আমাদের ব্যাপ্তি এবং অবশ্যই বাংলাদেশও এর অন্তরভূক্ত ।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে আমরা যা দেখেছি সে সম্পর্কে আমরা যে বার্তা পৌঁছে দিয়েছি তা হল বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, বিরোধি পক্ষের উপর হয়রানী রিপোর্টের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ স্পস্ট। আমরা বাংলাদেশের জনগণের মতপ্রকাশ, মেলামেশা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মৌলিক স্বাধীনতাকে সম্মান করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।”
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাম্প্রতিক ভূমিকাকে জোরালো সমর্থন করে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই প্রধান মুখপাত্র বলেন, “বাংলাদেশের বিষয়ে আমার, স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য এক এবং অভিন্ন। আমাদের এই আহ্বান অব্যাহত থাকবে এবং বিশ্বজুড়ে আমাদের একই অবস্থান।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে গৃহবন্দি প্রধান বিরোধি নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ সরকার কর্তৃক আটককৃত হাজার হাজার বিরোধি নেতা-কর্মীর মুক্তি প্রসংগে নেড প্রাইস বলেন, “আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের আইনের শাসনের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সহিংসতা, হয়রানি এবং ভীতি প্রদশর্ন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই যে কোনো দল বা প্রার্থী অন্য কোনো দল বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে হুমকি, উসকানি বা সহিংসতা পরিচালনা না করে এবং প্রকৃত নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ভোটারদের সহিংসতা, হয়রানি এবং ভয়ভীতি মুক্ত করার জন্য সকল প্রার্থীর সমক্ষমতার প্রয়োজন হয়, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। সহিংসতা, হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন, অযৌক্তিক আটকের সবগুলো ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কাছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট পরিচিত হয় বাংলাদেশকে দেয়া নিষেধাজ্ঞার সময়। সে থেকেই এই বিষয়টি বাংলাদেশে আলোচিত। মূলত মানবাধিকার বজায় রাখা নিয়ে সারা বিশ্ব ব্যাপী কাজ এবং নজর রেখে থাকে এই প্রতিষ্ঠানটি।