অনেক বাংলাদেশি বেকার হলেও বাংলাদেশের শ্রমবাজারে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় কাজ করছেন বলে জানান সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘কোনও বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ নেই যেখানে চোরাকারবারিকে গুলি করে মারা হয়৷”।
তিনি বলেন, “অনথিভুক্ত ভারতীয়রা বাংলাদেশে কাজ করছে।” বেসরকারীভাবে বাংলাদেশ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স ভারতে যায়।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীনের কাছে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে কী অসুবিধা হচ্ছে জানতে চাইলে সাবেক এই সচিব বলেন, নথিভুক্ত হলে কিছু সমস্যা আছে। বিভিন্ন কোম্পানি যারা তাদেরকে নিয়োগ দেয় তারা হয়তো ভাবে, বাংলাদেশি নেয়ার থেকে ভারতীয় নিয়োগ দিলে তাঁদেরকে এতো অধিকারের ব্যাপারে চিন্তা করতে হয় না৷ তারা যখন তখন চাকরি ছেড়েও যাবে না৷”
‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশো-তে অতিথি হিসেবে ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল৷
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষার দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, আরেকটি সমস্যা হলো বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যর্থতা, যার কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা স্নাতক শেষ করেও ইংরেজি বলতে পারে না।
তবে অধ্যাপক আসিফ নজরুল এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, “বাংলাদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে সবাই ইংরেজিতে কথা বলে এবং পরীক্ষা দেয়। যদি তাদের যোগ্যতা না থাকতো তাহলেতো শুধু ভারতীয় না, শ্রীলঙ্কা থেকেও আসতে পারতো৷”
অধ্যাপক নজরুল বলেন, “বাংলাদেশে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে ভারতীয়দের চেয়ে বেশি যোগ্য বাঙালি, বাংলাদেশি যারা কাজ পাচ্ছেন না, ঘুরে বেড়াচ্ছেন, বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বা ভূমধ্যসাগরে মারা গেছেন।”
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অসম বাণিজ্য প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোঃ তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ভারতের সাথে রপ্তানি বেড়েছে অল্প, সেক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি বেড়েছে অনেক৷”
মডারেটর খালেদ মুহিউদ্দিন প্রশ্ন করেন, ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি অন্য সরকারের চেয়ে আলাদা কি না? তার জবাবে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের ভারত নীতিতে অনেক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। আওয়ামী লীগ অনুগত নীতি গ্রহণ করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের চেয়ে ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে।”
আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘যুদ্ধবিহীন দুটি দেশের মাঝে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে৷ যেখানে ৯৮% বাংলাদেশি , হয়তো ২% ভারতীয়৷ এটা খুব স্পষ্ট ভারতের সাথে রাষ্ট্রের চেয়ে দলের সম্পর্ক হয়েছে বেশি বাংলাদেশের৷ নিজের নদীতে পানি নাই তার মধ্যে ফেনী নদীর পানি তাকে দিয়ে দিচ্ছে৷”
তৌহিদ হোসেন বলেন, “এমন কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ নেই যেখানে চোরাকারবারিদের গুলি করে হত্যা করা হয়।”
সম্প্রতি সীমান্তে বিএসএফ সদস্যদের গুলি চালানোর অভিযোগ করে আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সীমান্তে আমাদের বাহিনী নিহত হয়েছে এবং সরকার সামান্যতম প্রতিবাদও করেনি।
তৌহিদ হোসেনও মনে করেন, “আমরা অন্তত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানাতে পারতাম।”