বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করছে এমনই ধারণা করছেন অনেকে। বিরোধী দলের নেতারা জনগণদের নিয়ে আন্দোলন প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠান করতে গেলে পুলিশ দিয়ে তাদের হেনস্তা মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয় নিয়ে সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘ।
তবে এবার জবাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের কাছে মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমালোচনা করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্র না হওয়ায় তারা দেখা করতে পেরেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাঙালির দুঃখের শ্রবণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তাদের উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, তারা বলেছেন, বাংলাদেশ জনগণের রাষ্ট্র নয়, পুলিশি রাষ্ট্র। আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশ যদি পুলিশি রাষ্ট্র হয়, তাহলে আপনি যা বললেন, কেউ কি আপনাকে এই কথা বলতে বাধা দিয়েছে? দেননি মিটিং, কেউ বাধা দিয়েছে? সরকার দেয়নি। তিনি পত্রিকায় সেই বক্তব্য ছাপালেন, আমরা কি রাতে গিয়ে খবরের কাগজটা এমন গলায় ধরেছি যে ছাপা যায় না? তা করা হয়নি। মন্ত্রী আরও বলেন, বিরোধী দলের লোকজন টকশোতে যা খুশি তাই বলে, কিন্তু সরকার বাধা দেয় না। এটাই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা।
আনিসুল হক বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন ছিল না। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো মামলা বা প্রশ্ন না করার শর্ত ছিল। এই ছিল বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, ‘ওদের শনাক্ত করতে বেশি সময় লাগবে না। আমরা তাদের চেহারা জানি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতির পিতা মানে না, পতাকা মানে না, সংবিধান মানে না। মানি, জয় বাংলা মানে না, জয় বাংলা বলতে হাইকোর্ট লাগবে, বাংলাদেশ বেতার, রেডিও বাংলাদেশ হবে—যতদিন থাকবে বা যারা করবে, তাদের কি বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার আছে?’
মন্ত্রী বলেন, কমিশন হওয়া উচিত। রূপরেখা। তবে তা প্রতিহিংসামূলক বা প্রতিশোধমূলক নয়। বাংলাদেশ যে অবস্থায় পৌঁছেছে তা রক্ষা করতে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা বর্তমান প্রজন্মকে বাংলাদেশের ইতিহাস সঠিকভাবে জানাতে হবে।
আনিসুল হক বলেন, আইয়ুব খানের মন্ত্রিসভার অনেককেই জিয়াউর রহমান তার মন্ত্রিসভায় নিয়োগ দিয়েছিলেন। এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তিনি দেশ শাসন করতে শুরু করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পর তাদের শনাক্ত করা না গেলে এই শত্রুদের নিজেদের লালন-পালনের সুযোগ দেওয়া হবে।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ ব্যানার্জির সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার ও সাবেক রাষ্ট্রদূত একেএম আতিকুর রহমান।
দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে সুষ্ঠুভাবে আন্দোলন করতে পারছেনা সাধারণ মানুষ। পুলিশ দিয়ে তাদের হত্যা করা হচ্ছে বলেও দাবি জানান তারা।