বাংলাদেশ কূটনৈতিক দিক থেকে সব সময় যে সকল বড় শক্তি রয়েছে সেই সকল দেশের সাথে সুসম্পর্ক চায়। তাই বাংলাদেশ কখনো মানবাধিকার পরিষদে বড় ধরনের ঝুঁকি নিতে চাইবে না, নিরপেক্ষতায় সব সময় বজায় রাখার চেষ্টা করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মাইকেল কুগেল ম্যান, সম্প্রতি দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে কথা বলেন। তিনি মানবাধিকার পরিষদের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন-
বাংলাদেশ সব সময় বড় শক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। তাই মানবাধিকার পরিষদে কাউকে বিচলিত করার ঝুঁকি বাংলাদেশ নিতে চাইবে না। মার্কিন নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
সংবাদ মাধ্যম: মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার মধ্যে বিপুল সমর্থনে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। তুমি এটি কিভাবে দেখ?
মাইকেল কুগেলম্যান: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ দারুণ অবদান রেখেছে। এ কারণে দীর্ঘ দিন ধরে জাতিসংঘে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। সম্ভবত বিশ্বে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের এই ভূমিকা মানবাধিকার পরিষদে ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
সংবাদ মাধ্যম: র্যাব ও এর কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মানবাধিকার পরিষদে বাংলাদেশের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কী?
মাইকেল কুগেলম্যান: আমি মনে করি না যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাংলাদেশের চেয়েও বেশি সমালোচিত, দুর্বল মানবাধিকার খ্যাতি সম্পন্ন অনেক দেশও মানবাধিকার কাউন্সিলে কাজ করে। আমি মনে করি, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ যা করছে তার চেয়ে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণভাবে কী করছে সেদিকে বেশি নজর দেওয়া হবে।
সংবাদ মাধ্যম: বাংলাদেশ সাধারণত কোনো রাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় না। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে। মানবাধিকার কাউন্সিলে শক্তিশালী ভূমিকা গ্রহণে এটি কতটা সহায়ক হবে?
মাইকেল কুগেলম্যান: বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশ বড় শক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। তাই কাউকে বিচলিত করার ঝুঁকি নিতে চায় না বাংলাদেশ। তাই মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ খুব একটা শক্ত অবস্থান নেবে বলে আমি আশা করি না।
সংবাদ মাধ্যম: দুই সপ্তাহ আগে, মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যরা চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। মানবাধিকার কাউন্সিলের ভূমিকা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
মাইকেল কুগেলম্যান: সত্যি কথা বলতে, আমি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে মানবাধিকার প্রচারের জন্য একটি শক্তি হিসেবে দেখি না। আমার মতে, এই সংস্থা কিছু রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের অংশ হিসাবে সদস্য হওয়ার অনুমতি দেয়। তাদের অনেকের মানবাধিকার চর্চার দুর্বল ও ভঙ্গুর ইতিহাস রয়েছে। মানবাধিকার পরিষদের সদস্যদের মতো মানবাধিকার প্রচার ও সুরক্ষায় তারা তেমন ভূমিকা পালন করে না।
সংবাদ মাধ্যম: মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকার নিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ কি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে পারবে?
মাইকেল কুগেলম্যান: আমি মনে করি, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নির্বাচনকে বিশ্বব্যাপী একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে প্রচুর সমর্থনের মাধ্যমে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। বাংলাদেশ মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু অনেক সংশয়বাদী একমত হবেন না। বরং বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখাতে পারে যে এ দেশ জাতিসংঘের একনিষ্ঠ সমর্থক এবং আগামী দিনে একটি ভালো নির্বাচন উপহার দিয়ে বিশ্ব মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সংবাদ মাধ্যম: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মাইকেল কুগেলম্যান: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র্যাবের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির পর প্রশাসনিক পর্যায়ে থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়, তবে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়নি। অপরাধীরা শাস্তি পাবে এবং সেদিকটি গুরুত্ব পাবে সেটাই স্বাভাবিক। এদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ করেছে, সেটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন এমনটাই দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে।