Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / International / বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট করলো ম্যাথিউ মিলার

বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট করলো ম্যাথিউ মিলার

বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে আবারো নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে কোনো পক্ষ নিচ্ছে না। তারা শুধু নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় তা নিশ্চিত করতে চায়।

নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিবিদ ও কিছু পেশার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নীতিতে বাংলাদেশের কিছু বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের রাজনীতিবিদরা ভিসা নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হবেন।

আর সবশেষে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধেও এই নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই বিষয়টি উঠে এসেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে। স্থানীয় সময় সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার  বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারকে বাংলাদেশের ভিসা নীতি সম্পর্কে প্রশ্ন করে বলেন, “গত সপ্তাহে আপনি ঘোষণা করেছেন- বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ক্ষুন্ন করার জন্য দায়ী বাংলাদেশি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা নীতিমালার আওতায় ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বাইরে থেকে নির্বাচন বিঘ্নিত করার কোনো পদক্ষেপ বা এ ধরনের উদ্যোগ নেবে তাদের ওপরও বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আশ্বাস দিয়েছে যে নির্বাচনের আগে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। তাহলে এটা কি সত্য এবং এতে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

জবাবে ম্যাথু মিলার বলেন, আমরা আগেই বলেছি, গত মে মাসে যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন এই নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন, তখন উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনের আগে পক্ষ নেওয়া নয়, বরং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা বা সমর্থন করা। গত শুক্রবার যখন আমরা এই নতুন ভিসা বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছিলাম তখন আমরা উল্লেখ করেছি, এই নীতিগুলির মধ্যে রয়েছে – আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।

এরপর প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল তাদের দলের চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিতে এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। কারণ তার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর এবং তাকে গ্রেপ্তার অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?

জবাবে মিলার বলেন, এটা নিয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই।

পরে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে নতুন ভিসা বিধিনিষেধে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেন এবং এই বিষয়টি ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আপনি কি মনে করেন না যে এই নিষেধাজ্ঞা, যদি মিডিয়াতে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানকে ক্ষুন্ন করবে?

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেছেন, “আমি মনে করি যে আমরা (ইতিমধ্যে) যা বলেছি এবং যাদের জন্য এটি প্রযোজ্য, আমরা নির্দিষ্ট সদস্য বা নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ করিনি, কারণ মার্কিন ভিসার রেকর্ডগুলি গোপনীয় তথ্য।” তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য হবে বলে স্পষ্ট করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে গত মে মাসে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন সে সময় টুইটারে এ ঘোষণা দেন। এই নীতির অধীনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কোন বাংলাদেশীর উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে যারা দেশটির গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী বা চেষ্টা করেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরাও এর আওতায় পড়বেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করার আওতায় পড়বে সেগুলোও মার্কিন বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কার্যকলাপগুলির মধ্যে রয়েছে – ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণকে তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য সহিংসতার ব্যবহার এবং যে কোনও পদক্ষেপ – রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা মিডিয়াকে তাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা থেকে বিরত রাখা।

গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বিবৃতিতে বলেছেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট আজ পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্যরা।

About Nasimul Islam

Check Also

হাসিনার ট্রাভেল ডকুমেন্টে কী লিখেছে ভারত

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি টানা চারবার ক্ষমতায় ছিলেন, বর্তমানে ভারতীয় মাটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *