রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ ও নেপাল-ভারত তাদের সব মিশনে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিকে নতুন করে সাজাতে চায় ভারত। কারণ বাংলাদেশ ছাড়া তাদের আর কোনো জায়গা নেই। বাংলাদেশে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থে জামায়াতকে বিকল্প ট্রাস্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে ভারত।
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনায় এসব কথা বলেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
রনি বলেন, পাকিস্তানে যেভাবে ইমরানের জোয়ার উঠেছে, তা ভারতের জন্য ইতিবাচক দিক নয়। পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলো শুধু ভারতের শত্রু নয়, পাকিস্তানসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো শুধু ভারতের জন্য শত্রু নয়, এগুলো এখন আতঙ্কের নাম। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখনো যে তাদের (ভারত) অবস্থান আছে, সেটিকে টিকিয়ে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এমন একটি ভৌগোলিকভাবে অবস্থানে আছে, যেটা ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে একটি দল একবার ক্ষমতায় এলে পরের বার আরেকটি দল ক্ষমতায় আসে। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে প্রথম সিদ্ধান্ত নেয় যে, জামায়াত বিএনপির সঙ্গে থাকায় তাদের ভোট সবসময়ই বিএনপিকে ক্ষমতায় এনেছে।
এ জন্য ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে বিএনপি থেকে দূরে রাখার টার্গেট নেয়। অথবা বিএনপি জামায়াতের যে জোট সেটিকে ভাঙা। প্রথমত তারা চেষ্টার করেছে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। জামায়াতের নেতৃত্ব পরিবর্তন করে বিকল্প নেতৃত্বের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হয়েছে। জামায়াতকে ভাঙতে বিকল্প শক্তিগুলোকেও ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগ, সেখানেও ব্যর্থ হয়েছে।
পরে আওয়ামী লীগ বিদেশীদের দিয়ে চেষ্টা করে। এরই অংশ হিসেবে দিল্লির বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ জামায়াত বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করার অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু খুব একটা সুবিধা পায়নি দিল্লি।
সাবেক সংসদ সদস্য রনি বলেন, ২০১১ ও ২০১২ সালের দিকে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছিল, তখন ‘র’ একটি শক্তিশালী দল বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও কলকাতায় জামায়াত নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে। এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মও সঙ্গেও বৈঠক করেছে; কিন্তু কোনো দৃশ্যমান ফল পায়নি। ফলে সে বছর জামায়াতের অনেক ক্ষতি হয়। পরে মীর কাশেম আলীর মৃ”ত্যুদ”ণ্ডের পর জামায়াতের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকও ব্যর্থ হয়।
তিনি বলেছিলেন যে ২০১৮ সালে জামাত বিএনপির বিভক্তিতে ‘র’-এর হাত ছিল। আজ ভারতের বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বুঝতে পেরেছে যে তারা যেভাবে বিশেষ দল বা বিশেষ গোষ্ঠীকে সমর্থন করছে, আগামীকালের রাজনীতিতে তাদের খুব একটা ভবিষ্যৎ নেই। এতে ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও কূটনৈতিক স্বার্থ সবকিছুই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
কারণ ভারত খুব ভালো করেই জানে যে মানুষ যখন কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতি বিরক্ত হয়, যখন সেই গোষ্ঠীটি জনগণের দ্বারা অভিশাপিত হয় এবং লোকেরা সেই গোষ্ঠীকে সাহায্য করে না। এটা করতে ব্যর্থ হলে দেশে বিদেশে তাদের যত দল আছে সব ধ্বং”স হয়ে যাবে।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখনও তাদের উপস্থিতি রয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু হারিয়ে ভারত এখন তার সব প্রতিভা বাংলাদেশে কেন্দ্রীভূত করেছে।অতীতে যাদের ওপর ভরসা রেখেছিল তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রেখে। বিকল্প হিসেবে জামায়াতকে টার্গেট করা হয়েছে। কোনো কারণে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হলে জামায়াতের ওপর আস্থা রাখবে। প্রয়োজনে ইরানের মতো ইসলামী বিপ্লব করবে। সেটাও ভারতের জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হবে।