Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বাংলাদেশে কীভাবে নির্বাচন হবে জানিয়ে দিল ভারত

বাংলাদেশে কীভাবে নির্বাচন হবে জানিয়ে দিল ভারত

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত সচিব অরিন্দম বাগচী বলেছেন, বাংলাদেশে কীভাবে নির্বাচন হবে সে দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।

সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারত সফররত বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। খবর ইউএনবির।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কীভাবে নির্বাচন হবে সে দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। প্রতিবেশী হিসেবে ভারত চায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকুক এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করুক।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (বাংলাদেশ-মিয়ানমার বিভাগ) নবনীতা চক্রবর্তী, শিলাদিত্য হালদার (প্রথম সচিব, ভারতীয় হাই কমিশন অব বাংলাদেশ) এবং ভারত সফররত বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল।

আগামী নির্বাচন এবং এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর তৎপরতা ও ভারতের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে অরিন্দম বাগচী বলেন, বাংলাদেশে কীভাবে নির্বাচন হবে তা বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে। ভারত সবসময় চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকুক। ভারত সবসময় বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সম্মান করে।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা জয়ে ভারত পাশে ছিল, এখন আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমাদের কাজ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়ন। দুই দেশের সরকারই তা করছে। দুই দেশের সম্পর্ক চমৎকার।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে, সে দেশের মানুষের সঙ্গে। কোনো বিশেষ দলের সঙ্গে নয়।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতের সংবিধানে এমন কিছু নেই, ‘ভারতের সংবিধানে এমন কিছু নেই, ভারতে এমন কিছু হয় না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধানে যা বলা আছে, হয়তো সেটাই হবে। ওটা বাংলা‌দে‌শের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যেটা গণত‌ন্ত্রের জন‌্য ভা‌লো, নিশ্চয় বাংলা‌দেশ তা কর‌বে। বাংলা‌দেশের জনগণ তা কর‌বে।’

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে ভারত কীভাবে দেখছে এমন প্রশ্নের জবাবে বাগচী বলেন, বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের কার সাথে সম্পর্ক থাকবে সেটা তাদেরই সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। যদি তারা মনে করে এটা তাদের জন্য ভালো, তারা সেটাই বেছে নেবে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তুলনীয় নয়। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।

বাংলাদেশি নাগরিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় কর্মকর্তারা দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ভারতের সহায়তা, বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বাংলাদেশ-মিয়ানমার বিভাগ) স্মিতা পান্ত বলেছেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ককে কীভাবে সহজতর করা যায় সে বিষয়েও ভারত কাজ করছে। দুই দেশের বন্ধুত্ব বহু বছর আগের। সম্প্রতি ভারতীয় ভিসা নিয়ে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা সাময়িক। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে। আপনারা ভ্রমণ করলে ভারতই লাভবান হয়। সুতরাং এ সমস্যা কেটে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত দুই দেশের যোগাযোগ খাতে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং করছে। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল যোগাযোগ, ত্রিপুরার সাথে রেল ও নদী সংযোগ উল্লেখযোগ্য। ভারত গত দুই বছরে উন্নয়ন খাতে অনেক কিছু করেছে। ভারত ট্রানজিট ব্যবহার করে তৃতীয় দেশগুলিতে বাণিজ্য ও রপ্তানির সুযোগ দেয়। এতে লাভবান হচ্ছেন রপ্তানিকারকরা।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, “ভারত এখন উদ্ভাবন, সবুজ শক্তি, প্রযুক্তি ইত্যাদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংযোগ এবং উন্নয়ন সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি কোভি”ড মহামারীর সময়েও ভারতের উন্নয়ন সহায়তা বাংলাদেশে কার্যক্রম থেমে নেই তৃতীয় দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ভারতের কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবেন।

বিকেলে সাংবাদিকরা কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই) অফিসে যান।

ব্রিফিং সেশনে সংস্থার নির্বাহীরা ভারতের শিল্প খাতের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

তারা বলেন, বাংলাদেশে অনেক প্রকল্পে ভারতীয় বিনিয়োগ রয়েছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি ধীরে ধীরে কমেছে। এটা আরও কমবে বলে আশা করছেন ভারতীয় শিল্পপতিরা।

সন্ধ্যায় সাংবাদিকরা ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ভারতের নির্বাচন কীভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কারো কারো প্রশ্ন থাকতে পারে। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার মাধ্যমে এই সমস্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া যেতে পারে। একজন প্রার্থী তার অভিযোগ আদালতে নিয়ে যেতে পারেন। কমিশনের দায়িত্ব হল আদালতে তাদের সিদ্ধান্তকে ন্যায়সঙ্গত করে অভিযোগকারীকে সন্তুষ্ট করা।

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন এখন সবার আস্থাভাজন। এটা একদিনে হয়নি। তাদের দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের প্রমাণ করতে হয়েছে। এখন এটি জনগণের আস্থা ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

রাজীব কুমার বলেন, “আমি অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। কারণ, এই মাধ্যমে, ভুল তথ্য, গুজব এবং ভয় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এটি মোকাবেলা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

ভারতের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো জানে নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। তাই প্রতিটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচন কমিশনের ওপরও তাদের আস্থা আছে।

পরে রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাগচীর আমন্ত্রণে সফররত সাংবাদিকরা নৈশভোজে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি সাংবাদিক ছাড়াও নয়াদিল্লিতে কর্মরত সিনিয়র ভারতীয় সাংবাদিক এবং নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *