মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু একটি আলোচিত নাম। এবার সেই আলোচিত নামটিই আসছে বাংলাদেশে। জানা গেছে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু. শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সফরে আসছেন তিনি। তার সফরকে ঘিরে চলছে নানা আলোচনা। সফরসূচি অনুযায়ী, লু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন।
এ ছাড়াও আরো জানা গেছে দুই দিনের সফরে তিনি বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। তবে তার সফরকে ঘিরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত।
তা ছাড়া বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে তাও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, শ্রম, জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, জিএসপি পুনরুদ্ধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও সফরে জোর দেওয়া হবে। র্যাবসহ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। তবে অসমর্থিত সূত্রে বিভিন্ন গুজবও ছড়ানো হচ্ছে।
ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে সরকার ব্যস্ত থাকায় দেশের বিরোধী দলগুলোও সজাগ দৃষ্টি রাখছে। এমন পরিস্থিতিতে বসে নেই বিএনপিও। ডোনাল্ড লুর সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা। এবং তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে গুজব রয়েছে যে ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের হয়রানি না করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করতে পারেন। ফলে তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়েছে। দলের অনেক তৃণমূল নেতাও সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। এসব স্ট্যাটাসে বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট কিছুটা হলেও সমাধান হবে।
বিএনপি তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে নানা গুঞ্জন ছড়ালেও বিএনপির কোনো প্রতিনিধি দল ডোনাল্ড লুর সঙ্গে দেখা করবে কি না তা নিশ্চিত করতে পারেননি দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। বিষয়টিকে সরকারের সঙ্গে ‘দ্বিপাক্ষিক বৈঠক’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তবে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বিএনপি। যেভাবেই হোক, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির নেতারা দ্রুত ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত লুর সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিএনপিতে।
তবে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন, দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠকের জন্য তৎপর হওয়া উচিত। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি-নির্যাতন-নিপীড়নের কথা যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো খুবই জরুরি।
দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার বলেন, ‘ডোনাল্ড লুর সফর বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। আমরা তাকে বাংলাদেশে স্বাগত জানাই। লুরের এই সফর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সফর হোক। তার পরামর্শে সরকার ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসুক। আগামী দিনে যাতে আমরা সবাই মিলে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারি সেজন্য পদক্ষেপগুলো বের করা হোক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এবং শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেশে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিএনপি দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান। তিনি দাবি করেন যে বর্তমান সরকারের অধীনে গত ১৪ বছরে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এবং এটি প্রতিহত করার জন্য একটি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন।
আহমেদ আজম খান বলেন, “তার সফর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়া ও ভারতকে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করি। আমরা আশা করি তারা গণতন্ত্রে ভূমিকা রাখবে, বাংলাদেশের মানবাধিকার ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন।আমি তাদের কাছে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর পক্ষে অবস্থান করবে এমনটা আশা করি না।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ভারত, চীন, রাশিয়া বাংলাদেশের বর্তমান অনির্বাচিত সরকারকে সমর্থন করছে।ফলে আওয়ামী লীগ দেশ চালাচ্ছে রাক্ষস, এখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিপথগামী হয়েছে, এ অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ডোনাল্ড লু-এর সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হবে কি না তা জানা নেই।
সেলিমা রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বাংলাদেশে গণতন্ত্র দেখতে চায়। এজন্য আমরা দেশটির প্রতিনিধির বাংলাদেশ সফরকে স্বাগত জানাই। তবে এ সফরে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তার কোনো বৈঠক হবে কি না তা এখনো জানি না।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ডোনাল্ড লু আসছেন, সেটা আমি জানি। তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এখানে আসছেন। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন। এ কারণে আমাদের (বিএনপি) সঙ্গে তার বৈঠক বা আলোচনার কোনো প্রসঙ্গ আছে বলে মনে হয় না। তবে যেহেতু গণতন্ত্রপ্রিয় দেশের প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসেছেন, আমরা তাকে বিএনপির পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, এ দিকে বিএনপি ডোনাল্ড লু এর সাথে বৈঠক করবে কি না তা নিয়ে দল থেকেও জানানো হয়নি কিছুই। তার সাথে আদৌ কোনো বৈঠক হবে কি না তা নিয়ে বেশ সংশয় তৈরী হয়েছে।