নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে একের পর এক সতর্কবার্তা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি নির্বাচনকেন্দ্রিক পৃথক ভিসা নীতি ঘোষণা করেও মার্কিন সরকার। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ইতিবাচক মন্তব্য থাকলেও ফলাফল ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।
তবে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে একটি ব্যতিক্রম ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। থচ ব্যতিক্রম ভূমিকা নিতে দেখা গেছে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে। পিটিআইকে দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া, নির্বাচন পূর্ববর্তী ও নির্বাচনকালীন ব্যাপক অনিয়ম, সংঘাত, সহিংসতা এমনকি ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ার পর তিনদিনেও ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি পাকিস্তানে। এত কিছুর পরও পাকিস্তানের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত নন মার্কিন কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, যারাই পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠন করবে তারা তাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
8 ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের ১৬তম সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ১০ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যোগাযোগের ত্রুটির কারণে ভোট গণনা বিলম্বিত হয়েছে। পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ডন জানিয়েছে, সারাদেশে মোবাইল ফোন পরিষেবা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে যে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে সন্ত্রা”সী কর্মকাণ্ড অনেক বেড়েছে বলেও বলা হয়। দেশের নিরাপত্তার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এমতাবস্থায় নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় ‘সেফগার্ড’ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি ছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার অবশ্য পাকিস্তানের নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলার সময়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, জোট গঠন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের উপর অযাচিত বিধিনিষেধ আরোপের সমালোচনা করেছেন। তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হিসাবে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উপর আক্রমণ, ইন্টারনেট-টেলিযোগাযোগ সেবার উপর নিষেধাজ্ঞাকে উল্লেখ করেছেন।
একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংস্থাটি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভাব’ এর জন্য ‘কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অক্ষমতা’ এবং সমাবেশের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের উপর বিধিনিষেধকে দায়ী করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে বলেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের নির্বাচনে ভোট দিয়ে লাখ লাখ পাকিস্তানি নাগরিক তাদের কণ্ঠস্বর শুনিয়েছে। রেকর্ড সংখ্যক পাকিস্তানি নারী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্য এবং যুবকদের নিবন্ধন করা হয়েছে। পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী প্রতিষ্ঠান রক্ষা ও সমুন্নত রাখার জন্য আমরা পাকিস্তানের নির্বাচনী কর্মী, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রশংসা করি। আমরা এখন সময়োপযোগী, সম্পূর্ণ ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছি যা পাকিস্তানি জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করবে।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, অভিন্ন স্বার্থকে এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে পাকিস্তানের পরবর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত। আমরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে সমর্থন করে আমাদের অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার জন্য উন্মুখ। আমরা পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করতে, মার্কিন-পাকিস্তান গ্রিন অ্যালায়েন্স ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে জড়িত, জনগণের মধ্যে সম্পর্ক প্রসারিত করতে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সহ মানবাধিকারের প্রচারে সমর্থন অব্যাহত রাখব। আমরা আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করতে এবং নিরাপত্তা ও নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে পাকিস্তানি নাগরিকরা শান্তি, গণতন্ত্র এবং অগ্রগতি উপভোগ করতে পারে।