আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মানবাধিকার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করা ছাড়াও বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনে বাধা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যেটা সরকারের স্বার্থবিরোধী মন্তব্য। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের হস্তক্ষেপ নিয়ে সরব হয়েছে রাশিয়া। যে বিষয়টি অনেকটা ভিন্ন কূটনৈতিক চাল হিসেবে দেখা দিয়েছ।
এদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নিয়ে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে প্রকাশ্য বাকযুদ্ধ হয়। ঠিক সে সময় নিষিদ্ধ রুশ জাহাজ বাংলাদেশে ভিড়তে দেওয়া না দেওয়া নিয়ে পর্দার আড়ালে তৎপরতা চলছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ পিটার্সবার্গ বন্দর ছেড়ে আসে উরসা মেজর নামের রুশ পতাকাবাহী জাহাজটি। জাহাজটি ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল।
কিন্তু জাহাজটি বাংলাদেশে আসার আগেই যুক্তরাষ্ট্র ঢাকাকে জানায়, উরসা মেজর নামের জাহাজটি আসলে স্পার্টা থ্রি নামের রাশিয়ার মালিকানাধীন একটি জাহাজ। এটি নিষিদ্ধ, এই জাহাজের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে এবং উরসা মেজর হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা থাকা জাহাজকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দিলে সমস্যা হতে পারে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে জাহাজটি ভিড়তে দেওয়ার অনুমতির জন্য চাপ ছিল। বাংলাদেশে বিষয়টি উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছে। গত ২২ ডিসেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে রুশ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জানানো হয়, নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশ কোনো নিষিদ্ধ জাহাজ ভিড়তে দেবে না। ওই দিন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে বিষয়টি জানানো হয়।
বাংলাদেশ বলেছে, রাশিয়া অতীতে যে জাহাজ ব্যবহার করত ভবিষ্যতে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল পাঠাতে সেগুলো ব্যবহার করতে পারবে। তবে কোনো নিষিদ্ধ জাহাজে নয়।
এর আগে গত সপ্তাহে ঢাকায় রুশ দূতাবাস অভিযোগ করে যে, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন অজুহাতে বাংলাদেশে বা অন্যত্র হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। রাশিয়ার নীতি কখনই অন্য দেশে হস্তক্ষেপ করা নয়। এরপর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাশিয়াকে খোঁচা দিয়ে বলেন, রাশিয়ার নীতি কি ইউক্রেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?
২২শে ডিসেম্বর মস্কোতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন। রুশ মুখপাত্র ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের নামও উল্লেখ করেছিলেন। ২৫ ডিসেম্বর, ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন যে, ইউক্রেনে বড় দিনেও রাশিয়া বো”/মা হা”/মলা চালিয়েছে, যেটা কোনোভাবে গ্রহন যোগ্য নয় বরং একটি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
প্রসংগত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু মন্তব্য করেছে, যেগুলো বাংলাদেশের বিষয় সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাছাড়া মার্কিন রাষ্ট্রদূতের হঠাৎ করে বিএনপির এক গুম করার অভিযোগ ছড়ানো নিখোজ নেতার বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। যেটা আগে কখনো ঘটেনি বলে অনেকে জানিয়েছেন। এই বিষয়টির নেপথ্যর কারণ ও যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব অনেকের নিকট স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।