Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / economy / বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং রিজার্ভ নিয়ে এবার বড় দুঃসংবাদ দিলো আইএমএফ

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং রিজার্ভ নিয়ে এবার বড় দুঃসংবাদ দিলো আইএমএফ

গেলো বেশ কিছু ম্যাশ ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ঠেকতে শুরু করেছে তলানির দিকে। বলা বাহুল্য সেই অবস্থা প্রতিদিনই যাচ্ছে খারাপের দিকে। আর এরই মধ্যে এবার বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং রিজার্ভ নিয়ে এবার বড় দুঃসংবাদ দিলো আইএমএফ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অনুমান করেছে যে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উচ্চ ঘাটতিতে থাকবে ২০২৭ পর্যন্ত।

এই প্রক্ষেপণ ইঙ্গিত দেয় যে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ খুব শীঘ্রই কাটবে না।

আইএমএফ ২০২২-২৩ অর্থবছরে চলতি অ্যাকাউন্টের ঘাটতি জিডিপির ৩.৮ শতাংশ হতে পারে, যা আগের অর্থবছরের ৪.১ শতাংশ থেকে বেড়েছে।

একটি দেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি ঘটে যখন রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স আয়ের তুলনায় আমদানি বৃদ্ধি পায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, উচ্চ আমদানির কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি $৪.৫৭ বিলিয়ন থেকে বেড়ে $১৮.৭ বিলিয়ন হয়েছে।

ফলস্বরূপ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে এই বছরের ৩০ জুন ৪১.৮২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। রিজার্ভ ক্রমাগত হ্রাস পায় এবং ১৯ অক্টোবর ৩৫.৯৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

গত ১২ অক্টোবর প্রকাশিত আইএমফ গ্লোবাল ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৭ সালে বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি হবে ৩.২শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুসারে,২০২০-২১ অর্থবছরে ঘাটতি জিডিপির ০.৫ থেকে ১.৫ শতাংশের মধ্যে ছিল। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই হার ছিল ৩ শতাংশ।

চলতি মাসের শুরুতে বিশ্বব্যাংক অনুমান করেছে যে চলতি অর্থবছরে ঘাটতি হবে জিডিপির ৩.৬ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছরে ৩.৩ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ থেকে উত্তরণের জন্য আইএমএফসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশের ঋণ প্রয়োজন।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাঁচাতে গত জুলাইয়ে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছিল ঢাকা।

বাংলাদেশ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার ঢাকায় আসছে।

২১ অক্টোবর আইএমএফের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে দলটি ৯ নভেম্বর পর্যন্ত অবস্থানকালে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সাথে অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংস্কার এবং নীতি নিয়ে আলোচনা করবে।

ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং অস্থির বাজারের কারণে অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব এ বছরও অব্যাহত থাকবে। বৈশ্বিক মন্দার কারণে আমাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।’

পেমেন্ট ব্যালেন্সে বড় ধরনের ঘাটতি থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে ঘাটতি হবে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার। বাজেট সহায়তা হিসেবে সরকার বার্ষিক ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণের ব্যবস্থা করলে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে।

তিনি বলেন, সরকারের উচিত আগামী ২ থেকে ৩ বছরের জন্য একটি ব্যাপক ঘাটতি অর্থায়ন পরিকল্পনা তৈরি করা, যাতে এটি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) বা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা চাইতে পারে।

‘সরকার এটি করতে পারলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে’, যোগ করেন তিনি।

“রপ্তানি, আমদানি এবং রেমিট্যান্সের জন্য একাধিক হার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে পারবে না,” জাহিদ হুসেন বলেছেন, যিনি বলেছেন সরকারের একটি সঠিক বিনিময় হার নীতি থাকা উচিত৷

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘প্রতি মাসেই রিজার্ভ কমছে। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি ও রেমিটেন্স কমেছে। এ অবস্থায় সরকার আইএমএফ থেকে ঋণ পেলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

তিনি উল্লেখ করেছেন যে পাকিস্তানের জন্য আইএমফ ঋণ কর্মসূচির সাম্প্রতিক ঘোষণা মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির বিনিময় হার বাড়িয়েছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের অবস্থা পাকিস্তানের মতো খারাপ নয়। তবে এটাও সত্য যে আমরা খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই।’

প্রসঙ্গত, এ দিকে দেশের রিজার্ভ এখন থেকেছে ৩৫ বিলিয়ন ডলারেরও নিচে। আর এই কারনে বিপদ আরো বেশি বলে মনে করছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা। তবে সরকারের নেয়া বেশ কিছু পদক্ষেপকে তারা স্বাগত জানালেন আসলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা জানাতে পারেনি কেউই।

About Rasel Khalifa

Check Also

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যত বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকলো

আমদানি বিলের জন্য ১.৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *