বাংলাদেশে ভোটাধিকার ইস্যুতে জাতিসংঘ অব্যাহতভাবে জড়িত। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এ তথ্য জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে বাংলাদেশের জনগণ যাতে কোনো প্রকার হয়রানি বা ভয়ভীতি ছাড়াই নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিত করতে তিনি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এ মন্তব্য করেন।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্বেগের কথা জিজ্ঞেস করেন একজন সাংবাদিক। তিনি বলেন, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (আইসিএইডি) সহ ছয়টি শীর্ষ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তথাকথিত নির্বাচনের আগে সরকার গোটা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। বাংলাদেশে মৌলিক মানবাধিকার ও ভোটাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, “আমরা এই বিষয়ে ক্রমাগত নিয়োজিত রয়েছি এবং আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান অব্যাহত রাখব, যেখানে বাংলাদেশের সকল নাগরিক কোনো প্রকার ভয়ভীতি বা বাধা ছাড়াই ভোট দিতে পারবে।”
পরে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে আলাদা প্রশ্ন করেন সাংবাদিক। তিনি বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শ্রম অধিকার নিয়ে আলাদা বিবৃতি দিয়েছে। আপনারা জানেন, পোশাক শ্রমিকরা তাদের ন্যূনতম মজুরি পেতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু সরকার তাদের ওপর হামলা করছে এবং তারা তাদের বেতন পাচ্ছে না। তাতে কি…
এ সময় দুজারিক তাকে থামিয়ে বলেন, আমি দেখিনি। আমি আপনাকে এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় আপনার সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করতে উত্সাহিত করব।
উল্লেখ্য, ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নাগরিক ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ছয়টি সংস্থা এ কথা জানিয়েছে। একটি যৌথ বিবৃতিতে উদ্বেগ।
মঙ্গলবার মার্কিন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের (আরএফকেএইচআর) ওয়েবসাইটে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলো হলো, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস (আরএফকেএইচআর), ক্যাপিটল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্ট (সিপিজেপি), দ্য ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চার কনসোর্টিয়াম (ইউএটিসি), এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেস (এএফএডি), অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক (এডিপিএএন) ও ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস (আইসিএইডি)।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এ বছরের অক্টোবরের শেষ থেকে রাজনৈতিক বিরোধীদের সমন্বিত বিক্ষোভ ও সমাবেশের পর বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনে সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে। এই দমন-পীড়নে সাংবাদিকসহ ১৭ জন নিহত এবং ৮ হাজার ২৪৯ জন বিরোধীদলীয় নেতা আহত হন।
এছাড়া হবিগঞ্জের শায়েস্তানগর এলাকায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধনে পুলিশ, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এই ঘটনাগুলি সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের দিকে পরিচালিত পরিস্থিতিগুলির জন্য জবাবদিহিতা এবং একটি সম্পূর্ণ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানায়৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নির্বিচারে এবং টিয়ার গ্যাসের শেল, লাঠিসোটা, রাবার বুলেট এবং অনুরূপ অস্ত্রের অত্যধিক ব্যবহার সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পুলিশের সরঞ্জাম অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এই ধরনের সরঞ্জামগুলির নির্বিচারে ব্যবহার শুধুমাত্র নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে না, তবে এমন একটি পরিবেশও তৈরি করে যা উত্তেজনা বৃদ্ধি করে; বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি ভিন্নমত, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং গণতান্ত্রিক সংলাপের ভিত্তিকেও ক্ষুন্ন করে।