গত শুক্রবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে ভারত ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশিরাই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। ব্রিফিংয়ের লিখিত প্রতিবেদন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে মুখ খোলেনি যুক্তরাষ্ট্র।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ব্যক্তিগত বৈঠকের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করে না। ওয়াশিংটন, ডিসির একটি নেতৃস্থানীয় নীতি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান ব্যাখ্যা করেছেন যে, ‘একান্ত আলোচনা’ বলে যুক্তরাষ্ট্র যা গোপন রাখতে চাইছে, ভারত কেন তা প্রকাশ করল৷” রবিবার তিনি এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ভারত সম্ভবত বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে কড়া বার্তা দিতে চেয়েছিল। একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারত সম্ভবত বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে জোরালো বার্তা দিতে চেয়েছিল। বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না এ বিষয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি এর জবাব এড়িয়ে যেতে পারতেন।
বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতার কারণ প্রসঙ্গে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিগত আলোচনায় কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বলা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত যৌথ বিবৃতির বাইরে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলে না। ‘
কুগেলম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতার আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হলো বাংলাদেশের নির্বাচন এমন একটি ঘটনা যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ওয়াশিংটন সম্ভবত খুব ঘনিষ্ঠ অংশীদারের (মার্কিন ও ভারত) মধ্যে মতপার্থক্যের বিষয়টি সামনে আনতে চায়নি। ‘
মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত—দুই দেশই কিন্তু বলবে তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সমর্থন করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের বিকাশকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইস্যু বানাতে চায়। মূলত এ বিষয়টি নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের মতপার্থক্য।’
‘আরেকটি বিষয় না বললেই নয়” কুগেলম্যান বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে গত কয়েক বছরে অনেক জোরালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। অথচ এই বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হয় এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দুশ্চিন্তা ছিল।’
উল্লেখ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে আসছে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারী বাংলাদেশিদের ভিসা নিষিদ্ধ করার নীতি গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশে অন্য কোনো দেশের হস্তক্ষেপ চায় না।