সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন কানাডার পার্লামেন্টের ৮ সদস্য। কানাডা পার্লামেন্টের এই ৮ জন সিনেটর বাংলাদেশ-কানাডা পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের সদস্য। গত ৮ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা এই চিঠি পাঠিয়েছে দলটি। একই দিনে, গ্রুপের সভাপতি, ব্র্যাড রাডেকুপ, তার ব্যক্তিগত টুইটার হ্যান্ডেলে স্বাক্ষরিত চিঠিটির একটি ছবি পোস্ট করেছেন।
বাংলাদেশ-কানাডা পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ
বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে কানাডার একদল সিনেটর এবং হাউস অব কমন্সের সদস্যরা গত বছর কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ গঠন করে। কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাকে বাংলাদেশ-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি অসামান্য ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বিশেষ করে যখন দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে।
চিঠির বিবৃতি
বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আস্থা ব্যক্ত করে এই গ্রুপের ৮ জন সদস্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে লাখ লাখ মানুষ বিনা দ্বিধায় এবং বিনা বাধায় তাদের রায় প্রকাশ করতে পারবে।
চিঠিতে শেখ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে যা আশা করা হচ্ছে-
মত প্রকাশ ও ভিন্নমতের স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে। ভোট ডাকাতি, ভোট জালিয়াতি কোনো অবস্থাতেই হতে দেওয়া হবে না। সরকার যেকোনো মূল্যে এবং দলমত নির্বিশেষে সহিংসতা প্রতিরোধ করবে
সকলের অধিকার রক্ষা করবে। বাংলাদেশের প্রতিটি যোগ্য নাগরিকের ভোটের অধিকার সমুন্নত রাখবে। দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য প্রতি পক্ষপাতিত্বহীনতা নিশ্চিত করা হবে।
বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেন
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে কানাডিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যরা বিশ্বাস করেন যে বর্তমান সরকার উন্নয়ন ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার এই ধারা অব্যাহত রাখবে এবং একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভোট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা করবে।
বাংলাদেশ সফরের সারমর্ম কানাডার পার্লামেন্টে
কানাডার পার্লামেন্টের সদস্যদের স্বাক্ষরিত চিঠির আগে ৮ নভেম্বর বাংলাদেশ সফরের পর কানাডার সংসদ সদস্য চন্দ্রা আরিয়া সংসদে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলাম, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছিলাম, ছিলেন অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা। সঙ্গে দেখা করেছি। আমি হিন্দু মন্দির, বৌদ্ধ মঠ এবং একটি গির্জাও পরিদর্শন করেছি এবং আমি কয়েক ডজন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে দেখা করেছি। আমি অনেক ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে দেখা করেছি। দেশে স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক নীতিতে নিশ্চিয়তার সাথে বাংলাদেশ বেশ কয়েক বছর ধরে চমৎকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখছে। এভাবে এর লক্ষ লক্ষ নাগরিককে দারিদ্র্য থেকে তুলেছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো অবকাঠামো প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগ অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করছে এবং চাকরির সৃষ্টি করছে। এই সংকটময় সময়ে আমি কানাডাকে বাংলাদেশকে সমর্থন ও শক্তিশালী করার জন্য পশ্চিমা গণতন্ত্রের নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি; যাতে এটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে। বাংলাদেশ যাতে অত্যধিক প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে তা নিশ্চিত করার জন্য এটি প্রয়োজনীয়। ‘
কানাডা-বাংলাদেশ সম্পর্ক বাংলাদেশ কানাডার মধ্যে অর্ধ শতাব্দী ধরে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। কানাডা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে কানাডা বিভিন্ন আর্থিক ও সামাজিক বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে। কানাডা সবসময় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং বিশেষ করে শ্রমিক, বিভিন্ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং নারী ও মেয়েদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে কানাডা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার সম্মান নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করে।
যারা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন
১. ব্র্যাড রেডেকপ, এমপি, সাসকাটন পশ্চিম। চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি গ্রুপ। ২. সালমা আতাউল্লাহজান, সিনেটর, অন্টারিও এবং ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি গ্রুপ। ৩. সালমা জাহিদ, এমপি, স্কারবর্গ সেন্ট্রাল এবং ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি গ্রুপ। ৪. লুক ডেসিলেটস দুপাতে, এমপি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি গ্রুপ। ৫. কেন হার্ডি, এমপি, ফ্লিটউড-পোর্ট কেলস। ৬. লারি ব্রুক, এমপি, ব্রান্ডফোর্ড-ব্রান্ট। ৭. রবার্ট কিচেন, এমপি, সৌরিস-মুজ মাউন্টেইন এবং ৮. কেভিন ওয়াহ, এমপি, সাস্কাটুন গ্রাসউড।