প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হতে পারেন। তবে নয়াদিল্লিকে মনে রাখতে হবে যে, ঢাকায় যেই ক্ষমতায় আসুক তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। নয়াদিল্লির সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব সত্ত্বেও শেখ হাসিনার সরকার নাটকীয়ভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। ২০২২ সালে চীন বাংলাদেশে একক বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগকারী ছিল। ভারতের প্রভাবশালী দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়েছে।
এর শিরোনাম ‘এর শিরোনাম- ‘আই অন ঢাকা: এডিটোরিয়াল অন দ্য জিওপলিটিক্যাল ডেভেলপমেন্টস ইন দ্য রান আপ টু বাংলাদেশ পোল।’ এটি আরও বলেছে যে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের মধ্যে ২+২ মিনিস্টারিয়াল ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়, তাতে ছায়া ফেলেছিল তৃতীয় একটি দেশের বিষয়। সেটা হলো বাংলাদেশ। সেই আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব স্পষ্ট করে বলেন, ভারত বিশ্বাস করে নির্বাচন বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই এর মোকাবিলা করতে হবে। এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা, বিশেষ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বার বার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে যে, তিনি বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেপ্টেম্বরে তাদের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য যাকে তারা সন্দেহ করবে বাংলাদেশি এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেয়। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিন্নমুখী অবস্থান বা হিসাব, ঢাকার রাজনৈতিক ফলাফল নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের কতটা স্বার্থে আসবে সেটার ওপর জোর দেয়।
ঐতিহ্যগতভাবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের সম্পর্ক সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কোনো বিশেষ সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অভিযোগ, ওয়াশিংটন বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে। যাইহোক, ভারত এবং মার্কিন উভয়ের জন্য দুটি উদ্বেগ রয়েছে। তা হলো- বাংলাদেশে চীনের প্রভাব ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
আরেকটি হলো বাংলাদেশে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হুমকি। শেখ হাসিনার সরকার সুবিধাজনক সময়ে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে জোট করেছে। এটা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্যই উদ্বেগের বিষয়। তবুও, ভারতের পক্ষে বিশ্বাস করার খুব কম কারণ নেই যে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার অন্যরকম হবে।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপ না করার দৃষ্টিভঙ্গি বোধগম্য, যেটা এর আগের নির্বাচনে হয়েছিল, তখন নির্বাচন বর্জনকারী বিরোধী দলগুলোতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল ভারত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্রোতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভারত সরাসরি বেশি প্রভাবিত হয়। এদিক থেকে শেখ হাসিনা ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হতে পারেন। তবে নয়াদিল্লিকে মনে রাখতে হবে যে ঢাকায় যেই ক্ষমতায় আসুক তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।