বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদের বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে ভারত। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ফলে অন্যান্য দেশের অবস্থান নির্বিশেষে ভারত সংবিধান অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচনে সমর্থন দেবে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান হলো, সংবিধান অনুযায়ী অন্যান্য সংসদীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচন যেভাবে অনুষ্ঠিত হয়, বাংলাদেশের নির্বাচনও সেভাবেই অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ে যে নির্বাচনী সরকার স্থাপিত হবে তারা অন্যান্য দেশের মতো নির্বাচনী সরকারের রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন কমিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রাজনৈতিক দলগুলো এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে স্বাধীন অবস্থান নিতে পারে। অর্থাৎ, কোনো রাজনৈতিক দল যদি মনে করে যে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, তাদের সেই স্বাধীনতা থাকবে। কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্য কিছু নির্বাচনের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না। ভারতও নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে বা নির্বাচন ব্যাহত করার জন্য সহিংস রাজনীতিকে সমর্থন করবে না। অর্থাৎ সংবিধান অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের ইতিবাচক অবস্থানের সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর ফলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশ সরকারের ওপর যে চাপ দেয় তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
আগামী ১০ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে বাংলাদেশে নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের অবস্থানের কথা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন এই মতের সাথে সহমত পোষণ করে সেইজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হবে। অবশ্য ভারত গত কিছুদিন ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করছে। এই আলাপ আলোচনার ক্ষেত্রে ভারত তার অবস্থান সুস্পষ্ট করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ভারতের অন্যান্য বিষয়গুলোর সাথে একমত। শুধু তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে একটা অন্যরকম অবস্থান গ্রহণ করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সব প্রধান রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রয়োজন। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। অবশেষে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর সরকার এখন স্পষ্ট করে দিয়েছে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কোনো চেষ্টা করবে না। বিএনপিও এখন নির্বাচন বয়কটের পথে। সর্বশেষ অবস্থান অনুযায়ী, বিএনপি শুধু আসন্ন সংসদ নির্বাচনই বর্জন করবে না, নির্বাচন প্রতিহত করার জন্যও ব্যাপক প্রস্তুতি নেবে। এমন বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কী তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ কেউ মনে করেন যে এটি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যদি যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের নির্বাচনী উদ্যোগকে সমর্থন না করে বা এই ধরনের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ভিন্ন অবস্থান নেয়। কিন্তু এখন ভারতের এই সবুজ সংকেতের পর যুক্তরাষ্ট্র হয় এই অবস্থান পরিবর্তন করবে নয়তো যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্ত্বেও নির্বাচনের পথে হাঁটবে সরকার। এমন নির্বাচন হলেও বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সমর্থন পেতে খুব একটা সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। উল্লেখ্য, ভারত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল। আগামী নির্বাচনে ভারতের অবস্থান ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে।